যৌন নিপীড়নকারী যে দলেরই হোক শাস্তি হবে: উপাচার্য

যৌন নিপীড়নে জড়িতরা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকলেও শাস্তি পেতে হবে জানিয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2022, 06:23 PM
Updated : 21 July 2022, 06:35 PM

ঘটনায় জড়িতদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কথা শোনা যাচ্ছে উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার বিকালে গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন অবস্থান তুলে ধরেন।

উপাচার্য বলেন, “যেই হোক। ইনশাল্লাহ, এটা আমি উপর থেকে নির্দেশ পেয়েছি। যেই রাজনৈতিক দলেরই হোক। সে শাস্তির আওতায় পড়বে। কেউ রেহাই পাবে না। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

“এটা উপর থেকেও বলেছে, যে রাজনৈতিক কমিটির ছত্রছায়াই থাকুক না কেন। সে শাস্তি পাবে। যে জঘন্য কাজ করেছে তার উপযুক্ত শাস্তি পাবে।”

রোববার রাতে ক্যাম্পাসের হতাশার মোড় থেকে হলে ফেরার পথে এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। পাঁচজন ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ করা হয়।

ওই ঘটনায় মঙ্গলবার ওই ছাত্রী থানায় মামলা করেন। আগের দিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেন।

এঘটনায় বুধবার থেকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাসহ কয়েক দফা দাবিতে বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। বৃহস্পতিবার প্রতিবাদে উত্তাল ওঠে চবি ক্যাম্পাস।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার

এরপর বিকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, “এটা খুব অযৌক্তিক ঘটনা, দুঃখজনক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ছেলেমেয়ে, শিক্ষকদের, কর্মচারীদের নিয়ে বসবাস করি।

“আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বলি। সেদিনই তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি করেছি। আরও দুটো কমিটি আমাদের আছে। একটা অভিযোগ কমিটি এবং একটা নিপীড়নবিরোধী কমিটি, হাইকোর্ট যেটা বলে দিয়েছে।

“তারপরও আমরা সাথে সাথে কমিটি করেছি। আমরা যে কমিটি করেছি তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কাজ করছে। তাদের ফাইন্ড আউট করতে নির্দেশ দিয়েছি। ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর মেয়েটির নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা সাথে সাথে করেছি।”

উপাচার্য বলেন, “আমাদের ইউনিভার্সিটি তো ছাত্রীদের পক্ষে, আমরা ছাত্রীবান্ধব। এখানে অন্যায় কেন করবে? ছাত্রীরা তো বোন। কারো বোন, কারো মা, কারো মেয়ে। আমার মেয়ে ওরা। ওদের রক্ষা করা আমার দায়িত্ব।

“এই ন্যাক্কারজনক ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সচেতন আছি। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স। আমাদের প্রশাসন ও প্রক্টোরিয়াল বডি সবাই মিলে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে অতিসত্ত্বর ব্যবস্থা করব।”

ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও জড়িত কেউ এখনো আটক হয়নি। যৌন নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রীর করা মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

ঘটনার পরদিন সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দিতে গেলেও চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের ‘বাধায়’ তা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রীর এক বন্ধু।

অবশ্য রেজাউল হক রুবেলের দাবি তিনি ওই ছাত্রীকে অভিযোগ দিতে বাধা নয় বরং সহযোগিতা করেছেন। এসব ঘটনার মধ্যে রুবেলকে ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থী’ কাজের অভিযোগে শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

রোববার রাতের ঘটনায় বুধবার আবাসিক হলে ছাত্রীদের রাত ১০টার মধ্যে ফেরার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এরপর বুধবার রাতে আবাসিক হলের ছাত্রীরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবি জানায়। দাবি পূরণের আশ্বাসে তারা রাত পৌনে একটায় কর্মসূচি শেষ করে।

এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা চবি ক্যাম্পাসে প্রতিবাদি কর্মসূচি পালন করছে। তাতে কয়েকজন শিক্ষকও সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছেন।

আরও খবর: