রোববার রাতে ওই ঘটনার পর বুধ ও বৃহস্পতিবার দিনভর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পর বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে এ দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে বহু বছর ধরে দুটি ধারা বিদ্যমান। একটি ধারা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী, অন্যটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রেজাউল হক রুবেল প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিনের এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে ছাত্রলীগের মহিউদ্দিন অনুসারী নেতাকর্মীরা যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির দাবিতে একটি মানববন্ধন করে। পরে রাতে নাছিরের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে।
বিকালের মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সুমন নাছির বলেন, “আমাদের বোনের সাথে যারা অন্যায় করেছে, সে যে দলেরই হোক প্রশাসন যেন তাকে ছাড় না দেয়। আমরা দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের সাবেক উপ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল হাসান দিনার বলেন, “প্রশাসনের নিকট এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
“অন্যথায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।”
ছাত্রলীগ নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দূর্জয় বলেন, “কোন রকম কালক্ষেপণ না করে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করছি।”
রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হতাশার মোড় থেকে হলে ফেরার পথে এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে পাঁচজন। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ।
ঘটনার পর চার দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত কেউ এখনও আটক হয়নি। যৌন নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রীর করা মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার পরদিন সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দিতে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের বাধায় তা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর এক বন্ধু।
তবে রেজাউল হক রুবেলের দাবি, তিনি ওই ছাত্রীকে অভিযোগ দিতে বাধা নয় বরং সহযোগিতা করেছেন।
ইতিমধ্যে রুবেলকে ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থী’ কাজ করায় শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেই নোটিস পেয়ে বুধবার ঢাকায় যান রুবেল।
ওই ঘটনায় মঙ্গলবার ওই ছাত্রী থানায় মামলা করেন। সেদিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেন।
রোববার রাতের ঘটনার পর বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলে ছাত্রীদের রাত ১০টার মধ্যে ফেরার নির্দেশনা দেয়।
এরপর বুধবার রাতে আবাসিক হলের ছাত্রীরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবি জানায়। দাবি পূরণের আশ্বাসে তারা রাত পৌনে একটায় কর্মসূচি শেষ করে।
এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেছেন। তাতে কয়েকজন শিক্ষকও সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: