কোরবানি ঈদ উপলক্ষে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এবার স্থায়ী তিনটির পাশাপাশি অস্থায়ী হাট আরও তিনটি। এর বাইরেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছোট পরিসরে গরু বিক্রি চলছে পুরোদমে।
সবগুলো হাটের চিত্র প্রায় একই, ছোট ও মাঝারি গরুর খোঁজেই ঘুরছেন ক্রেতারা। দামের কারণে বড় গরুর চাহিদা কমেছে এবার।
১ জুলাই থেকে গরুর হাট বসলেও বন্দরনগরীর হাটগুলোতে বেচাকেনা শুরু হয় মূলত বৃহস্পতিবার থেকে। শুক্রবার সকাল ও বিকালে প্রচুর গরু, মহিষ ও ছাগল বিভিন্ন হাটে বিক্রি হয়েছে।
বড় দুই স্থায়ী হাট সাগরিকা ও বিবিরহাট ঘুরে দেখা গেছে, গরুর পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। তবে ছোট ও মাঝারি গরুর ক্রেতা বেশি হলেও এ ধরনের গরুর দাম বেশি। আর বড় গরুর সংখ্যা বেশি হলেও এগুলোর ক্রেতা তুলনামূলক কম।
শুক্রবার দুপুরে সাগরিকা গরুর হাটে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় তিনটি মাঝারি আকারের দেশি জাতের ষাঁড় কেনেন হালিশহর বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সাইফুল।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গত বছর এই সাইজের তিনটা গরু কিনেছিলাম সাড়ে চার লাখ টাকায়। এবার গরুর দাম বেশি।”
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামের সাগরিকা পশুরহাটে মানুষের ঢল। শুক্রবার বিকালে হাট থেকে গরু কিনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা। ছবি: সুমন বাবু
বাড়তি দামের বিষয়ে তিনি বলেন, গরুর খাদ্যের দাম অনেক বেশি এখন। তার উপর গাড়ি ভাড়া, কর্মীদের বেতনসহ অনেক খরচ আছে। খুব বেশি লাভ হয় এমন না।
হাট ঘুরে দেখা যায় মোটামুটি দুই থেকে আড়াই মন ওজনের দেশি জাতের ছোট গরু বিক্রি হচ্ছে এক লাখ টাকার কিছু কম-বেশি দামে।
হাটে শরিকদের নিয়ে গরু কিনতে আসা আমিনুল হক প্রায় তিন ঘণ্টা সাগরিকা বাজারে ঘুরে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় কালো রঙের একটি ষাঁড় কিনেছেন।
আমিনুল বলেন, “আমরা যারা ভাগে কয়েকজন মিলে গরু কিনি তাদের বাজেট সীমিত। গত বছর যে গরু ৮০ হাজার টাকায় কিনেছি এবার সেই গরুর দাম চাইছে দেড় লাখ টাকা। এই গরুটা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দাম চেয়েছিল। অনেক দরদাম করে এই দামে কিনলাম।”
কুমিল্লা থেকে ৫০টি গরু নিয়ে এসেছেন একটি খামারের ব্যবস্থাপক সোহেল। তিনি বলেন, “গরু আনছি পাঁচদিন আগে। প্রত্যেকটা গরুর খাওয়া খরচ আছে। আমরা পাঁচজন লোক আছি গরুর সাথে। যে দামে বিক্রির আশা ছিল তা না পেলেও আজ কাস্টমার আছে। তাই গরু ছাড়তেছি।”
এই হাটে দেড় লাখ টাকায় একটি শাহিওয়াল জাতের গরু কেনেন মো. আতিক। তিনি বলেন, “এই গরু গত বছরের বাজারে খুব বেশি হলে এক লাখ ১০ হাজার টাকা দামে পাওয়া গেছে। এবার দাম খুব বেশি। এই সাইজের গরুর ক্রেতাও বেশি। তাই বেপারিরা ছাড়ছে না।”
অক্সিজেন এলাকার মো. রেজাউল হক এক লাখ টাকায় ছোট আকারের একটি গরু কেনেন।
তিনি বলেন, “এই টাকায় হাট থেকে গরু কেনাই কঠিন। শহরে বেশিদিন আগে গরু কিনে রাখার জায়গা নেই। তাই কিনতে হয় দুয়েকদিন আগে। আজকে সকাল থেকে ঘুরতে ঘুরতে বিকালে কিনলাম। কারণ এখানে ছোট গরু কমতে শুরু করেছে।”
বিবিরহাটের ইজারাদার মাহমুদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে বাজারে ক্রেতা আছে। এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত গরু আছে। বিক্রি ভালোই হচ্ছে। আরও গরু পথে আছে। অনেক জেলা থেকে আসতেছে।”
চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার হাটগুলোতে কুমিল্লা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও কোরবানির জন্য গরু আসে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ৮ লাখ ২১ হাজারের মত, হাট বসেছে মোট ৬০টি স্থায়ী ও ১৪২টি অস্থায়ী।
এরমধ্যে কোরবানির জন্য পশু রয়েছে ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১টি। ২০২১ সালে জেলায় ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি পশু প্রস্তুত ছিল। কোরবানি হয়েছিল ৭ লাখ ৪২ হাজার ৪২৪টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, “পুরো জেলায় চাহিদার তুলনায় এবার ৩০-৩৫ হাজার গরু কম আছে। তবে যেহেতু বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রামে গরু আসে তাই সরবরাহে কোনো সংকট নেই। হবেও না।
অতি গরমে ঝিমিয়ে পড়া ও মুখ দিয়ে লালা পড়ার প্রবণতা ছাড়া হাটে আনা কোরবানির পশুতে তেমন কোনো রোগবালাইয়ের খবর মেলেনি বলে জানান তিনি।