চবিতে নিয়োগ নিয়ে অডিও ফাঁস: দুজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

ফারসি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে ‘আর্থিক লেনদেন নিয়ে ফোনালাপের অডিও’ প্রকাশের ঘটনার তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দুজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় একটি মামলাও হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2022, 03:39 PM
Updated : 7 July 2022, 03:39 PM

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান জানান, সিন্ডিকেটের সভায় উপাচার্যের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীনের পদাবনতি এবং হিসাব নিয়ামক শাখার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আহমদ হোসেনকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীনের ফোনালাপ পর্যালোচনা করে, ‘দায়িত্বে থেকে অসাদাচরণ’ করায় তার পদাবনতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পদাবনতি হওয়ায় এখন তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত থাকবেন।

আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আহমদ হোসেনের ফোনালাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন’ করায় বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ধারা ১২ এর ৩(এফ) ধারা অনুসারে তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত হয়।

অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফারসি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন নিয়ে ফোনালাপের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচারের পর সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল করে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।

“এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির সুপারিশে ৫৩৮তম এক্সট্রা অর্ডিনারী সিন্ডিকেট সভায় এই দুই জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

তদন্ত কমিটির সুপারিশে এ বিষয়ে থানায় একটি ফৌজদারী মামলা করার সিদ্ধান্তও হয়েছে সিন্ডিকেট সভায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিন্ডিকেট সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় রবিন ও আহমদ হোসাইনের সঙ্গে একটি চক্র জড়িত বলে তদন্ত কমিটি মনে করে।

“তবে এ বিষয়ে রবিন ও আহমদ হোসাইন কোনো তথ্য দেয়নি। যার কারণে তদন্ত কমিটি এদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করার সুপারিশ করেন। এতে আইনানুসারে ওই চক্রে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য জানা যাবে এবং তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।”

গত মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রত্যাশী দুই ব্যক্তির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা ও এক কর্মচারীর ‘আর্থিক লেনদেন’ নিয়ে আলাপের দুটি অডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন ও হিসাব নিয়ামক শাখার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আহমদ হোসেনকে কথা বলতে শোনা যাচ্ছিল অডিওতে।

এর মধ্যে রবীনের সঙ্গে এক নিয়োগপ্রার্থীর কথিত ফোনালাপের যে রেকর্ডটি ছড়িয়েছে, তাতে ‘টাকা ছাড়া নিয়োগ না হওয়া’র কথা আলোচনা হচ্ছিল।

আহমদ হোসেনের ফোনালাপ বলে যেটি ছড়িয়েছে, তাতে শিক্ষক পদে চাকরির জন্য ১৬ লাখ, তৃতীয় শ্রেণির পদে ১০ থেকে ১২ লাখ ও চতুর্থ শ্রেণির পদে ৮ লাখ টাকা দিতে হবে- এমন আলোচনা হয় এক নিয়োগপ্রার্থীর সঙ্গে।

ওই অডিও ক্লিপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে হাটহাজারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয় বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে ওই সময় তদন্ত কমিটি গঠন ও নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্তও বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তর থেকে ফারসি বিভাগের নিয়োগের ফাইল একটি ফাইল হারিয়ে যায়। ঘটনাটি তদন্তের পর তদন্ত কমিটি ওই দপ্তরে কর্মরতদের বদলির সুপারিশ করে।

বৃহস্পতিবারের সিন্ডিকেট সভায়, ফাইল হারানোর ঘটনার দিন ওই দপ্তরে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের ‘সতর্ক করে প্রশাসনিক ভবনের বাইরে বদলি’ করার সুপারিশও করা হয়েছে বলে জানান রেজিস্ট্রার মনিরুল হাসান।