বুধবার রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল সদর দপ্তরের (সিআরবি) ইওসিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন নামে কোরিয়ান কোম্পানিটির কর্মকর্তারা প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে সেতুর প্রস্তাবিত স্থান, নকশা, নির্মাণকাল ও ব্যয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন রেল কর্মকর্তাদের কাছে।
বৈঠক শেষে পূর্ব রেলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আগামী অগাস্ট মাসে প্রতিষ্ঠানটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর ডিপিপি তৈরি করে প্রস্তুাবটি একনেকে পাঠানো হবে।
অনুমোদন ও টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে আগামী বছর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর আশা প্রকাশ করলেও কোন মাস নাগাদ শুরু হবে, তা স্পষ্ট করতে পারেননি তিনি।
জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, “প্রস্তাবিত কালুরঘাট সেতুতে দুটি ডেক থাকবে। এর উপরের অংশে থাকবে সড়ক এবং নিচের অংশে রেল লাইন। দুটিই ডবল লাইনের হবে।”
প্রস্তাবিত সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৭৮০ মিটার। যেখানে দুই পাশে হাঁটার রাস্তা রাখা হবে। আর উচ্চতা ১২ দশমিক ২ মিটার ও বায়াডাক্ট (নদীর পর ব্রিজের অংশ) হবে ৫ দশমিক ৬২ মিটার। ব্রিজের প্রতিটি স্প্যানের দূরত্ব হবে ১০০ মিটার, আর পিয়ার থাকবে আটটি।
কালুরঘাট সেতুর ফোকালপার্সন মো. গোলাম মোস্তফা জানান, বর্তমান সেতুর সেতুর উজানে হালদা নদীর দিকে হবে এ সেতু। ৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতু নির্মাণে কাজ শুরুর পর অন্তত চার বছর সময় লাগবে। কোরিয়ান ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) সহজ শর্তে বাংলাদেশকে সেতু নির্মাণের ঋণ দিতে সম্মত হয়েছেন।
সভায় উপস্থিত চট্টগ্রাম-৮ আসনের (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-বায়েজিদ) সাংসদ মোসলেম উদ্দিন বলেন, ২০১০ সালে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালুরঘাটে আরেকটি সেতুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে একনেকে উঠার পরও নানা জটিলতায় ফেরৎ এসেছিল প্রস্তাবটি। আগের এমপিও (প্রয়াত মঈনুদ্দিন খান বাদল) চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি বলেন, কালুরঘাট সেতুর প্রস্তাবিত নকশায় গাড়ি উঠানামার সড়কের দুই পাশে রেল এবং ব্যক্তিগত অনেক অনেকের জায়গা আছে। ভূমি অধিগ্রহণে যেহেতু জটিলতা হয় সেহেতু যতদূর কম ভূমি অধিগ্রহণ করে রেলওয়ের জায়গা ব্যবহার করে সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের মাধ্যম এই সেতু বন্দর নগরীর সঙ্গে কক্সবাজারের রেল যোগাযোগেরও অন্যতম সংযোগ।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতুটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
সেতুটি নগরী লাগোয়া বোয়ালখালী উপজেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার লোক পারাপার হয়।
চট্টগ্রাম শহর থেকে বোয়ালখালী উপজেলায় পৌঁছাতে যেখানে সময় লাগার কথা ৩০ থেকে ৪০ মিনিট, সেখানে একমুখী এ সেতু দিয়ে চলাচলে সময় লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টাও।
এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি রুটে চলাচল করে দুই জোড়া ট্রেন। দোহাজারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফার্নেস ওয়েল আনা-নেওয়ার জন্যও ট্রেন চলে এই সেতু দিয়ে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ চালু হলে তারও পথ হবে এই সেতু।
৯০’র দশকে চট্টগ্রাম দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে নগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের প্রধান রাস্তা।
২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় এ সেতুটি বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ করেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে ছোটখাট সংস্কার কাজ করে জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে বর্তমান কালুরঘাট সেতু।