শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের যাত্রা শুরু

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2022, 12:22 PM
Updated : 6 July 2022, 12:22 PM

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসভিত্তিক প্রথম এ আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর বুধবার উদ্বোধন করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের যোগসূত্র স্থাপন করে গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে ১১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার।

৪ দশমিক ৭ একর জায়গার উপর নির্মিত এই স্থাপনা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রচারাভিযান থেকে দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তরের নতুন ধাপ।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশে আমি মনে করি যে, আজকে আমাদের যে উদ্যোগটা সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে আমাদের একেবারে ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে সবাইকেই আমরা যে শিক্ষাটা দিচ্ছি, তার ফলাফলটা এই দেশের মানুষ পাবে। সেটাই আমরা চাই আর সেজন্যই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কাজ করতে।”

রপ্তানিযোগ্য ডিজিটাল ডিভাইস বাংলাদেশেই উৎপদিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী দিনে আমাদের পণ্য রপ্তানিতে গার্মেন্টসের সাথে সাথে সমান তালে আমাদের ডিজিটাল ডিভাইস বাংলাদেশে উৎপাদন হবে এবং আমরাও রপ্তানি করব। রপ্তানি ক্ষেত্রে এটাই হবে সব থেকে বড় পণ্য, যা আমরা রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব।”

সেই লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং সেভাবে সারা দেশের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ছেলে-মেয়ে, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম কোনো ক্ষেত্রেই যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পিছিয়ে না থাকে,সেই ভাবেই তাদের এই প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি।

“আমি মনে করি যে সমস্ত অবকাঠামো আমরা তৈরি করছি আমাদের আগামীর তরুণ প্রজন্মের মেধা, বুদ্ধি, জ্ঞানের বিকাশ কেন্দ্র এবং তাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেমের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে জাতির স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। যেই বাংলাদেশ জাতির পিতা আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন।”

এই ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার যে সমস্ত উন্নয়ন করে দিয়েছে, সেটা যেন সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন না হয়ে যায়, সেই দিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।”

২০১৭ সালের ৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চুয়েটের শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন প্রকল্পটির অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী।

জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত বাস্তবায়িত এই প্রকল্পে ৫০ হাজার বর্গফুট  জায়গাসহ ১০ তলা পর্যন্ত একটি ডিম্বাকৃতি ইনকিউবেশন বিল্ডিং অন্তর্ভুক্ত। প্রতিটি ফ্লোরে ৫ হাজার বর্গফুট আছে।

এই প্রকল্পে শেখ জামাল ও রোজী জামালের নামে দুটি ডরমিটরিও নির্মাণ করা হয়েছে, যা একই সময়ে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

ভবন দুটির মোট আয়তন ৪০ হাজার বর্গফুট এবং প্রতিটিতে ৪০টি কক্ষ রয়েছে। এ ছাড়া একটি ৬ তলা বহুমুখী প্রশিক্ষণ ভবন রয়েছে, যার মোট ফ্লোর এলাকা ৩৬ হাজার বর্গফুট। প্রতিটি ফ্লোর ৬ হাজার বর্গফুটের।

ইনকিউবেটরে বিটিসিএলের মাধ্যমে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। ইনকিউবেশন ভবনে একটি স্টার্টআপ জোন, ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্টর্মিং জোন, একটি এক্সিবিশন সেন্টার, একটি ই-লাইব্রেরি জোন, একটি ডেটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, ভিডিও কনফারেন্সিং রুম এবং একটি কনফারেন্স রুম রয়েছে।

এ ছাড়া ব্যাংক এবং আইটি ফার্ম, সাইবার ক্যাফে, ফুড কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, রিক্রিয়েশন জোন, ডিসপ্লে জোন এবং মিডিয়া রুমগুলোর জন্য আলাদা কর্নার থাকবে।

বহুমুখী প্রশিক্ষণ ভবনে ২৫০ জন ধারণ ক্ষমতার একটি অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম এবং ৫০ জন ধারণ ক্ষমতার চারটি কম্পিউটার/সেমিনার কক্ষ রয়েছে।

একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ল্যাব, একটি মেশিন লার্নিং ল্যাব, একটি অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন, একটি সাবস্টেশন এবং একটি সোলার প্যানেলও স্থাপন করা হচ্ছে।

ইনকিউবেটরের লক্ষ্য আইটি উদ্যোক্তাদের বিকাশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার জন্য জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি সম্প্রসারণ করা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কারিকুলাম ও বাস্তবে ইন্ডাস্ট্রি পর্যায়ে যে দক্ষতা প্রয়োজন তাতে পার্থক্য দৃশ্যমান হয়। সেই পার্থক্য ঘোচাতে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করবে ইনকিউবেটর।

আরও খবর