তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা তৈরিতে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তথ্য প্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল ও উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে যাত্রা শুরু করছে ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2022, 03:23 PM
Updated : 5 July 2022, 03:23 PM

বুধবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ক্যাম্পাসে স্থাপিত এই আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত এই প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার ঘুরে দেখা যায়, ৫০ হাজার বর্গফুটের ১০-তলা একটি ইনকিউবেশন ভবন এবং ৩৬ হাজার বর্গফুটের ৬-তলা একটি ‘মাল্টিপারপাস’ প্রশিক্ষণ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৫ একর জমির ওপর গড়ে তোলা এই স্থাপনায় আছে দুটি আবাসিক ডরমিটরি।

প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মশিউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কারিকুলাম ও বাস্তবে ইন্ডাস্ট্রি পর্যায়ে যে দক্ষতা প্রয়োজন তাতে পার্থক্য দৃশ্যমান হয়। সেই পার্থক্য ঘোচাতে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করবে ইনকিউবেটর।

বুধবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ক্যাম্পাসে স্থাপিত আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

“চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), রোবটিক্স, বিগ ডেটা, ব্লক চেইনসহ নতুন প্রযুক্তি শিখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে ধারণা দেয়ার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য এই উদ্যোগ। যেসব টেকনলোজির কথা বলছি তা দ্রুত পরিবর্তনশীল। কারিকুলাম এত দ্রুত বদলানো যায় না।”

অধ্যাপক মশিউল বলেন, “এখন স্টার্টআপ ও ইনোভেশনের যুগ। নতুন নতুন আইডিয়াকে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস হিসেবে ডেভলপের জন্য সহযোগিতা দরকার তা বিশ্ববিদ্যালয় কারিকুলামে দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করা সবসময় সম্ভব নয়। একটা স্টার্টআপকে কিভাবে এন্টারপ্রেনারশিপে রূপান্তর করা যায় তা করতে এ প্রতিষ্ঠান হাব হিসেবে কাজ করবে।”

ইনকিউবেশনের ধারণা ব্যাখ্যা মশিউল হক বলেন, “একজন তরুণ গ্র্যাজুয়েটের কাছে ধারণা (কনসেপ্ট) থাকে। কিন্তু তা ব্যবসায় রূপান্তরে যে প্রযুক্তি, আইনগত ও অর্থ সহায়তা দরকার, তা থাকে না।

“এখানে তাদের চাহিদা মত মেন্টরশিপ, কোম্পানির সঙ্গে নেটওয়ার্কিং এবং ১৮ মাস গবেষণা সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যমে আইডিয়া বাস্তব রূপ নেবে। তারপর ইন্ডাস্ট্রিকে আমরা নিয়ে আসব। উপযুক্ত মনে করলে তারা চুক্তি করবে। দেশে বড় বড় হাইটেক পার্ক হচ্ছে। যাদের আইডিয়াগুলো সফল হবে তাদের সেখানে পাঠানো হবে।”

এই ইনকিউবেটরে কম্পিউটার ল্যাব ও এআই মেশিনারি, বিগ ডেটা ল্যাব, রোবোটিক্স ল্যাব, সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব আছে। এছাড়া দুটি মিনি সুপার কম্পিউটার নিয়ে আরেকটি ল্যাব স্থাপন করার কাজ প্রক্রিয়াধীন।

ইনকিউবেটরে কাজ করতে আগ্রহি শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানদের কী প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করা হবে জানতে চাইলে ড. মো. মশিউল হক বলেন, “ছাত্ররা তাদের আইডিয়ার টেকনিক্যাল ও বিজনেস প্ল্যান দিয়ে আবেদন করবে। বিশেষজ্ঞ দল তা বিবেচনা করে চূড়ান্ত করবে। ৬ মাস কোনো ফি নেয়া হবে না।

“মাস্টার ট্রেনাররা আসবেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রি এবং বিদেশ থেকেও প্রশিক্ষক আসবেন। একসাথে ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়ার সুযোগ আছে। এখানে ২৮টি স্টার্টআপকে আমরা স্থান দিতে পারব।”

বুধবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ক্যাম্পাসে স্থাপিত আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তাদের বার্ষিক রিটার্ন, বিনিয়োগের পরিমাণ, ফান্ডিং এবং প্রোফাইল দেখে স্থান বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

তিনি জানান, এরইমধ্যে ইনকিউবেটরে ১০ম তলায় ‘চালডাল ডটকম’ কার্যালয় হিসেবে বরাদ্দ নিয়েছে এবং সেখানে চুয়েট-এর দুইশ শিক্ষার্থীর কাজের সুযোগ হবে।

এলজি বাটারফ্লাই, হুহাইওসহ অনেক প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করছে এবং অষ্ট্রেলিয় প্রতিষ্ঠান ক্লিক প্যাড, এলজি বাটারফ্লাই এবং চুয়েট এলমনাইদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইনকিউবেটরে জায়গা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছে।

চুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো রফিকুল আলম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চুয়েট-এ প্রথম আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর এটি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা তৈরিতে গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে এই উদ্যোগ।

“চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে উপস্থাপনে সহায়ক হবে এই ইনকিউবেটর। আশা করি তরুণরা এখানে সফল প্রজেক্ট করে আইটি খাতে অবদান রাখবে।”

দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গড়ে তোলা এমন ইনকিউবেটর এটাই প্রথম। ২০১৭ সালের ৬ জুন একনেক সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। চুয়েট-এর শিক্ষার্থীরাসহ দেশের প্রযুক্তি খাতের যে কোনো উদ্যোক্তা এখানে কাজের সুযোগ পাবেন।