বিএম ডিপোর ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতাসহ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের স্বল্পতা এবং পর্যাপ্ত ফায়ার হাইড্রেন্ট না থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2022, 04:34 PM
Updated : 4 July 2022, 04:34 PM

তদন্তে আগুন লেগে বিস্ফোরণের কারণ উদঘাটন না হলেও এ ঘটনার দায় ডিপো কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না বলে মনে করছে কমিটি।

জুন মাসের শেষ সপ্তাহে তিন সদস্যের কমিটি তাদের ২৪ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে এ ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে।

গত ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসে নয় কর্মীসহ মোট ৪৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

পরে টার্মিনাল ম্যানেজার কুদরত-ই-খুদাকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, “কমিটি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে এনেছেন বলে জেনেছি।”

সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “হয়তো জমা পড়েছে। আমার কাছে আসার পর প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এর পর সবাইকে জানানো হবে।”

তদন্ত কমিটির একজন সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে রাসায়নিকের (হাইড্রোজেন পার অক্সাইড) সাথে অন্যান্য পণ্যের কন্টেইনারও ছিল।

“আলাদা লেইন থাকার কথা বলা হলেও টেক্সটাইল পণ্যও ছিল। তাদের ব্যবস্থাপনাও ঠিক ছিল না।”

তিনি বলেন, “এছাড়া ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের যোগাযোগ কম ছিল। ডিপোর নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সাথে আন্তঃসংযোগ ছিল না।

“সেখানে কী ধরণের পণ্য ছিল তার বিষয়েও কোনো তথ্য তারা পায়নি। ওই ডিপোতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রও ছিল না। ডিপো অনুপাতে পর্যাপ্ত ফায়ার হাইড্রেন্টও সেখানে পাওয়া যায়নি।”

সব মিলিয়ে ডিপো ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের ‘গাফিলতি ছিল’ মন্তব্য করে তদন্ত কমিটির ওই সদস্য বলেন, “দুর্ঘটনার জন্য তারা দায় এড়াতে পারেন না।”

ডিপোর শ্রমিক-কর্মচারীদের সিগারেটের আগুন কিংবা কোনো অর্ন্তঘাত থেকে এ অগ্নিকাণ্ড কি না সে বিষয়টি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করে কমিটি।

স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন বিএম কন্টেইনার ডিপোতে থাকা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আনা হয়েছিল তাদেরই আরেকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিকেল কমপ্লেক্স থেকে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা ডিপোর শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা ছাড়াও আল রাজী কেমিকেল এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ধরণের দুর্ঘটনা রোধে প্রতিবেদনে চারটি ভাগে বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির ওই সদস্য বলেন, “রাসায়নিকসহ বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে সেসব নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে।

“এছাড়া আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বাড়ানো এবং তথ্য আদান-প্রদানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।”

এছাড়া হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ যে কোনো রাসায়নিক রপ্তানির ক্ষেত্রে হ্যান্ডলিং যথাযথ করার সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

তবে বিএম ডিপোর জিএম ক্যা্প্টেন (অব) মায়নুল আহসান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানি না।

এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ছাড়াও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ আলাদা তদন্ত কমিটি গঠনকরে।

আরও খবর: