‘সংরক্ষণের খরচ বাড়ছে, কিন্তু চামড়ার দাম বাড়ছে না’

লবণের দাম বেড়েছে, বেড়েছে আনুসঙ্গিক ব্যয়ও, কিন্তু সেই অনুপাতে পশুর চামড়ার দাম না বাড়ায় হতাশ আড়তদাররা।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2022, 04:06 PM
Updated : 3 July 2022, 04:06 PM

চট্টগ্রামের চামড়ার আড়তদাররা বলছেন, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে সবচেয়ে বেশি যে লবণের প্রয়োজন, এবছর তার দাম বস্তায় বেড়েছে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা।

বাংলাদেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা, তার ৮০-৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে জবাই করা পশু থেকে। ফলে এটাই চামড়া সংগ্রহের মৌসুম।

আগামী ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ হবে। তার পরের দুই দিনও পশু কোরবানি চলবে। ওই সময় পাড়া-মহল্লা ঘুরে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া কিনবেন, তা তারা বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ত সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারিগুলোর কাছে বিক্রি করবে।

ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, “১০০টি চামড়া সংরক্ষণের জন্য এক বস্তা লবণের প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে শুধু প্রতিটি চামড়ার সংরক্ষণে লবণের খরচ হবে ১০ টাকা। এর সাথে যুক্ত হবে শ্রমিক, গুদাম খরচসহ অন্যান্য বিষয়গুলো। হিসেব করলে প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে অন্তত ৩০০ টাকা খরচ হয় আড়তদারদের।”

তিনি জানান, আগে লবণের ৭৪ কেজি ওজনের একটি বস্তার দাম ছিল সাড়ে ৬০০ টাকা। তবে কয়েক মাসের ব্যবধানে তা এখন বেড়ে হয়েছে এক হাজার টাকা।

কাদের বলেন, ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনার সময় ২০ শতাংশ কর্তন করে চামড়া কিনে থাকে। আবার চট্টগ্রামে বিক্রি না হলে সেসব চামড়া ঢাকায় পাঠানোর প্রয়োজন হয়, সেখানে প্রতি চামড়ায় ৩০ টাকা করে আড়তের খরচ দিতে হয়।

সম্প্রতি ঢাকায় এক মতবিনিময় সভায় লবণের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কথা উঠেছিল। তখন লবণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নূরুল কবির বলেছিলেন, লবণের দাম এর চেয়ে কম আর হতে পারে না। বরং চামড়ার দাম বাড়লে লবণের দামটি আর চোখে লাগবে না।

চামড়ার দর প্রতি বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেঁধে দিয়ে থাকে। এ বছর এখনও দেয়নি। গত বছর গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাদের ঠকান আড়তদাররা। আর আড়তদারদের কথা হল, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা উচ্চ দামে কেনায় লোকসান গুনতে হয় তাদের।

চট্টগ্রামের আড়তদার সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, সেটা সংরক্ষণ করার পরের দাম। “অনেকে মনে করেন, আড়তদাররা এই দামে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করবেন, যেটা ভুল।”

‘ন্যায্য দাম’ না পাওয়ার অজুহাতে ২০১৯ সালে মৌসুমী ক্রেতারা সড়কে ফেলে রাখে কোরবানির পশুর চামড়া। ফলে এসব চামড়া নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

এর পরের বছর মহামারি ও লোকসানের শঙ্কায় একপ্রকার অদৃশ্য হয়ে পড়েছিলেন কোরবানিকেন্দ্রিক মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তবে গত বছর কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ীর দেখা মিললেও তারা আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেই চামড়া কিনেছিলেন।

মৌসুমী ব্যবসায়ীদের হিসেব করে চামড়া কেনার পরামর্শ দেন আড়তদারদের নেতা মুসলিম।

চামড়া বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

এবারের ঈদে চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদাররা চার লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।

আড়তদার সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামে যে চামড়া সংগ্রহ করে তার মধ্যে চট্টগ্রামের ট্যানারি রীফ লেদার সংগ্রহ করে ২৫-৩০ হাজার। অন্যগুলো বিক্রির জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঢাকার ট্যানারি মালিকদের উপর।

ঢাকার ট্যানারি মালিকরা তাদের বকেয়া টাকা সঠিক সময়ে পরিশোধ করেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

কাদের জানান, গত দুই বছর যথাসময়ে দাম পরিশোধ করলেও ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে চট্টগ্রামের আড়তদারদের পাওনা আছে অন্তত ২৮ কোটি টাকা।

টাকা আদায় করতে না পেরে অনেক আড়তদার ব্যবসাও ছেড়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আগে তাদের সমিতিভুক্ত ২৫০ জন সদস্য থাকলেও গত বছর চামড়া সংগ্রহ করেন মাত্র ৩৭ জন।

“ট্যানারি মালিকরা বিভিন্ন প্রণোদনা ও ব্যাংক ঋণ পেলেও কাঁচা চামড়া আড়তদাররা সে হিসেবে কিছুই পান না,” বলেন কাদের।