মজুদ বাড়তে থাকায় ব্যাংক ঋণের বাড়তি সুদ এড়াতে আমদানিনির্ভর এই পণ্য কম দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন- অনেক আমদানিকারকদের দাবি এমনটাই। আর বিভিন্ন স্থানে বন্যা ও ঊর্ধ্বমুখী বাজার পরিস্থিতির কারণেই মসলা বিক্রির মৌসুম হিসেবে পরিচিত কোরবানি ঈদে চাহিদা কমেছে বলে মনে করছেন তারা।
দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত কয়েকদিনে প্রকারভেদে বিভিন্ন মসলার দাম কমেছে ২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
এর প্রভাব দেখা গেছে খুচরা বাজারেও; এলাচ ছাড়া অন্যসব মসলার দাম কমতির দিকে বলে জানান রেয়াজউদ্দিন বাজারের দোকানিরা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত মালামাল থাকলেও চাহিদা কম। অন্যবার এসময়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে যতটুকু মসলার অর্ডার পেতেন এখন তা পাচ্ছেন না। আর ঈদের পর এমনিতেই চাহিদা কমে যায়। ফলে আগামী কয়েক মাসেও মসলার দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
খাতুনগঞ্জে মসলা কেনাবেচার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিশন এজেন্ট পূর্ণেন্দু চৌধুরী মনে করেন, অতিরিক্ত আমদানি এবং আগের মসলা মজুদ থাকায় বাজারে চাহিদার চেয়েও বেশি পণ্য রয়েছে। এ কারণেই দাম কমে যাচ্ছে।
ক্রেতা কম থাকার পেছনে মানুষের আর্থিক অবস্থা এবং সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতিকে কারণ তুলে ধরেন মসলা আমদানিকারক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি অমর কান্তি দাশ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বাজারে ক্রেতা কম। কিন্তু পর্যাপ্ত মজুদ আছে। যে কারণে কম দামেই অনেকে মসলা বিক্রি করে দিচ্ছেন।
গত রোজার ঈদের পর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে খাতুনগঞ্জে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ ও জিরার মত মসলার দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছিল। এক মাসের ব্যবধানে তা আবার কমতে শুরু করেছে।
খাতুনগঞ্জে দাম যেভাবে বেড়েছিল অনেকটা সেরকম করেই সবচেয়ে বেশি কমেছে এলাচের দাম। ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারিতে এলাচের কেজি এখন সর্বোচ্চ এক হাজার ২৫০ টাকা, যা গত মাসে ছিল এক হাজার ৪৬০ টাকা।
এ বাজারে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৩৭৫ থেকে ৩৮০ টাকায়, মে মাসে দর ছিল ৩৯৪। এক মাস আগেও এক হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০ থেকে এক হাজার ২০ টাকায়।
আর দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২৯০ থেকে ৩৫৫ টাকা কেজি দরে, যা এক মাস আগে ৩০৫ থেকে ৩৭৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
এক আমদানিকারক বলেন, দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে অনেকেই খরচের লাগাম টানছেন। যেহেতু মসলা অতিপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নয় সেজন্য অনেকেই ব্যবহারও কমিয়ে ফেলেছেন। ফলে চাহিদাও কমে গেছে।
তিনি বলেন, ক্রেতা কমে যাওয়ায় আমদানি করা মসলার মজুদ বাড়ছে; যে কারণে ব্যাংক ঋণের সুদের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। লোকসানের পরিমাণ কমাতে অনেক বড়বড় আমদানিকারক কম দামেই তাদের পণ্য বিক্রি করে দিচ্ছেন।
বাজারে টিকে থাকতে ছোটরাও একই পথ অবলম্বন করছেন বলে জানিয়েছেন আরও কয়েকজন আমাদিনকারক।
রোববার রেয়াজউদ্দিন বাজারে এলাচ বিক্রি হচ্ছিল এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়, আগের চেয়ে যা কোনো হেরফের হয়নি। তবে লবঙ্গ, দারুচিনির দাম কমেছে আগের তুলনায়।
লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছিল এক হাজার ১০০ টাকা, যা আগের মাসে ছিল এক হাজার ২০০ টাকা। মানভেদে জিরার দরও অপরিবর্তিত রয়েছে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা।
এদিকে এক মাস আগে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দারুচিনি মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকায়।
আরও পড়ুন: