ঢোল-করতালে চট্টগ্রামে বর্ণিল রথযাত্রা

ঢোল, করতাল, বাদ্য, বাজনার সঙ্গে বর্ণিল শোভাযাত্রায় মহামারীর দুই বছর পর রথযাত্রা উৎসবে মেতেছে চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2022, 06:34 PM
Updated : 1 July 2022, 06:34 PM

শুক্রবার সকাল থেকেই বন্দর নগরীতে শোভাযাত্রা ঘিরে দেখা যায় সাজ সাজ রব। দুপুর গড়াতেই শুরু হয় নন্দনকানন তুলসীধামের কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব।

এসময় মদনমোহন নরসিংহ গোপাল জীও’র মন্দির থেকে ঢোলক বাদ্য, মঙ্গল শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে শ্রীজগন্নাথ-সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবকে রথারোহণ করানো হয়।

পরে বেলুন উড়িয়ে ও রথের রশি টেনে রথপরিক্রমা শুরু করেন তুলসীধামের মোহন্ত এবং অতিথিরা। নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় এসে শেষ হয় পরিক্রমা।

কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন বলেন, “দুইশ বছরের প্রাচীন নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় তুলসীধামের কেন্দ্রীয় রথযাত্রায় মানুষের মিলনমেলা দেখে আমি অভিভূত।

জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে শোভাযাত্রা

“ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের আত্মার সম্পর্ক। ভূ-তাত্ত্বিক সীমানা আত্মার সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে না। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক কখনও ছিন্ন হবে না। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষকে সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।”

অনুষ্ঠানে নগর পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, “চট্টগ্রাম সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়েছে। রথযাত্রা উৎসবে সবাই অংশগ্রহণ করছে। এখানে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারছে।”

চট্টগ্রাম কৈবল্যধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচার্য্য বলেন, “শ্রীজগন্নাথ-সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবের আশীর্বাদে জীবন হয় সুন্দর। সমস্যায় ঘেরা জীবনে মুক্তি দেন ত্রি-দেবতা। জীবন রথ পরিচালিত করতে এই রথযাত্রা দেয় অনুপম শিক্ষা।” 

জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে শোভাযাত্রা

তুলসীধামের মোহন্ত শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজের পৌরহিত্যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উৎসব উদ্যাপন কমিটির সভাপতি রঞ্জন প্রসাদ দাশগুপ্ত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শ্যামদাশ ধর।

তুলসীধামে রথযাত্রা উপলক্ষে দিনব্যাপী আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল- নামযজ্ঞ, মদনমোহন পূজা, জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলভদ্রের পূজা, মহাপ্রসাদ বিতরণ।

কেন্দ্রীয় রথের মহাশোভাযাত্রায় হাজারী লেইন শ্রীকৃষ্ণায়ন রথ, পাথরঘাটা জগন্নাথ মন্দিরের রথ, গঙ্গাবাড়ির রথ, গৌর গিরিধারী মন্দিরের রথ, সদরঘাট পার্বতী ফকির পাড়ার রথ, মাইজপাড়ার রথ, ফিরিঙ্গীবাজার শাহাজীপাড়ার রথ, টেকপাড়ার রথ, এনায়েত বাজার কেদারনাথ তেওয়ারী কলোনির রথ, টাইগারপাস জগন্নাথ সংঘের রথ, পুরাতন কাস্টমস এলাকার রথ, ইপিজেড শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের রথসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের রথ পরিক্রমায় অংশ নেয়।

এদিন নন্দনকানন ইসকন মন্দির নগরীর ডিসি হিল প্রাঙ্গণ থেকে ২৫তম কেন্দ্রীয় রথযাত্রা আয়োজন করে।

জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে শোভাযাত্রা

এখানে উৎসবের উদ্বোধন করে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “জনগণ যার যার ধর্ম পালন করবে। অন্যের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার অধিকার কারও নেই।

“এই দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করবে তাদেরকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করা হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশয় দেওয়া হবে না।

“সেই আর্দশ হচ্ছে ধর্মে ধর্মে কোন হানাহানি থাকবে না। দেশের সকল নাগরিক সমান অধিকার পাবে । যারা সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে তদন্ত করে তাদের  বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রথযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন ভারতের মায়াপুর হতে আগত ইসকনের অন্যতম সন্যাসী শ্রীমৎ অমিয় বিলাস স্বামী মহারাজ ও ইসকন বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি শ্রীমৎ ভক্তিপ্রিয়ম গদাধর গোস্বামী মহারাজ, ভারতের মায়াপুর সংকীর্তন ও প্রচার বিভাগের পরিচালক শ্রীমৎ ভক্তি বিজয় ভাগবত স্বামী মহারাজ।

নন্দনকানন ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ পণ্ডিত গদাধর দাস ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে ও সুমন চৌধুরীর সঞ্চালনায় এর উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন। বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক তারণ নিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী।

জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে শোভাযাত্রা

শোভাযাত্রায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লাখো ভক্ত এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, পৌরাণিক সাজ ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে যোগ দেন।

প্রবর্তক ইসকন মন্দির থেকে শুরু হওয়া রথযাত্রার উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

নগরীর বিভিন্ন আয়োজনের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও রথযাত্রার বর্ণিল আয়োজন করা হয়। বোয়ালখালীর পশ্চিম সারোয়াতলীর সেন বাড়ির এবারের রথের আয়োজন দ্বিতীয়বারের মত। এছাড়া বাঁশখালী বাণীগ্রামসহ বিভিন্ন মন্দির ও সংঘের আয়োজনে রথযাত্রা হয়।