বায়েজিদ বোস্তামী থানার পশ্চিম শহীদ নগর এলাকার একটি ভবনে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার এ দম্পতি এবং তাদের এক স্বজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মুহাম্মদ আলী হোসেন।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- নূর আলম (৪০), তার স্ত্রী হাছিনা বেগম (৩৪), তাদের স্বজন হাছিনা বেগম ওরফে মিনুয়ারা ওরফে মুন্নী (২৬)।
মাদক আইনের পাশাপাশি নূর আলম ও হাছিনা দম্পতির বিরুদ্ধে বৈদেশিক নাগরিক আইনে আলাদা একটি মামলা করা হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা আলী হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার নূর আলম দম্পতি মিয়ানমারের নাগরিক। অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে স্থায়ী হয়ে যায়।
নূর আলম নিজেকে বাংলাদেশি বলেই দাবি করছেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন রয়েছে। বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার রৌফাবাদে জমিও কিনেছেন তিনি।
উপ-কমিশনার আলী হোসেন বলেন, “পোশাক ও কথাবার্তার সন্দে হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করে। নূর আলম নিজে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চট্টগ্রামে থাকলেও তার বাবা-মা, ভাই-বোনরা থাকে কক্সবাজারের বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।”
গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আরিফুর রহমান বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নূর আলম জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালে কিশোর বয়সে সে বাংলাদেশে এসে স্থায়ী বসতি গড়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে তিনি মিয়ানমার যাওয়া আসা করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার কাছ থেকে মিয়ানমার যাওয়া-আসার একটি পোর্ট এন্ট্রি পাসও জব্দ করা হয়েছে।”
বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার বিষয়ে নূর আলম পুলিশকে বলেছেন, ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় তিনি ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
এর আগেও নূর আলম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মাস ছয়েক আগে জামিনে ছাড়া পান।
তার বাসায় ইয়াবার মজুদ আছে- এমন তথ্যে সোমবার রাতে পশ্চিম শহীদ নগরের জানে আলম টাওয়ার নামে একটি ভবনের পঞ্চম তলায় তার ভাড়া বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ।
অভিযানে তার বাসা থেকে সাড়ে চার হাজার পিস ইয়াবা, নগদ দেড় লাখ টাকা, বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার ও বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বইও জব্দ করে পুলিশ।
উপ-কমিশনার আলী হোসেন বলেন, “নূর আলমের নির্দিষ্ট কিছু লোক আছে। তারা মিয়ানমার, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে এসে তাকে দিয়ে যায়। ঘরের জানালা, খাট, ওয়ারড্রপ, পানির ফিল্টারসহ বিভিন্ন স্থানে সে ইয়াবা রাখার চেম্বার তৈরি করে রেখেছে। সেখানে তার কাছে নিয়ে আসা ইয়াবাগুলো মজুদ করে। পরে বিভিন্ন স্থানে সে সরবরাহ করে।”
নূর আলমের অর্থের উৎস সন্ধান করে তার বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার আইনে মামলার সুপারিশ করছে পুলিশ। রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকার করায় নূর আলম ও তার স্ত্রী হাছিনার বিরুদ্ধে মাদক মামলার পাশাপাশি বৈদেশিক নাগরিকত্ব আইনেও মামলা করা হয়েছে বলে জানান পরিদর্শক আরিফুর।
গ্রেপ্তার মুন্নী হলেন হাছিনার বড় ভাইয়ের স্ত্রী। তিনি নিজেকে বাংলাদেশি দাবি করেছেন। তার নাগরিকত্বের বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।