শনিবার সকালে পুরাতন রেল স্টেশন চত্বরে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ। বিকালে সেখানে আলোচনাসভা হয়। ব্যানার এবং ফেস্টুনে সাজানো হয় নগরীর বিভিন্ন মোড়।
বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এবং পরে সেতু পেরিয়ে জাজিরা প্রান্তে ফলক ও ম্যুরাল উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই দশক আগে তিনিই এ সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
আলোচনাসভায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। কোনো ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। আজ পদ্মা সেতু হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও নেতৃত্বের কারণে হয়েছে।
“আওয়ামী লীগ জনগণের রাজনীতি করে। কাজের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করে। পদ্মা সেতু আমাদের আত্মমর্যাদার, অহংকারের প্রতীক। এটি আমাদের যোগ্যতার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শী সরকার প্রধান। সেটি তিনি আবারও বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ করলেন।”
বিএনপির উদ্দেশ্যে নাছির বলেন, “যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিল সেদিনও আপনারা উপহাস করেছেন। তখন বলেছিল, মানুষকে ধোকা দিতে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। আসলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে কিছু হবে না।
“আজ বেগম খালেদা জিয়ার গুণধর দুর্নীতিতে দণ্ডিত পুত্র বিদেশে বসে দেশের নেতাকর্মীদের সাথে কিসের বৈঠক করেন? ডিজিটাল বাংলাদেশের সব সুফল ভোগ করছেন।
“লজ্জা লাগে না আপনাদের? দেশের অগ্রযাত্রার বিরোধিতা করেন? আজ পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করছেন! পদ্মা ওপারের মানুষ এতদিন অবহেলিত ছিল। ব্যাপক শস্য উৎপাদন হত। কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পেত না।
“আজ কৃষকরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। দুপাড়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে। ওখানে শিল্পায়ন হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ২১টি জেলা সরাসরি উপকৃত হবে।”
নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় নগর আওয়ামী লীগ নেতারা ছিলেন।
এদিন নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
“স্বপ্ন বাস্তবায়নে অমিত সাহসী প্রাধনমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি নানামুখী চাপের মুখেও বাঙালির স্বাতন্ত্র্য, নিজ পরিবার ও আওয়ামী লীগ সরকারের আত্মমর্যাদার কথা ভুলে যাননি।
“কারণ তাঁর ধমনীতে বহমান রক্ত স্রোত বঙ্গবন্ধুর মতোই স্ফুরিত হয়েছে। তিনি জাতির পিতার বাঙালিত্বের অহংবোধ ও আদর্শ থেকে চুল পরিমাণ বিচ্যুত হননি।”
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর আত্মমর্যাদাবোধের তেজ শেখ হাসিনার মধ্যে থাকায় তিনিও আন্তর্জাতিক চাপগুলো রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় উড়িয়ে দিয়েছেন।”
মেয়র রেজাউল বলেন, “স্বপ্ন দেখে ভুলে যাওয়া নয় স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলার নাম রাজনীতি। একটি সেতুর অভাবে ১৮টি জেলার মানুষের যোগাযোগ স্থবির ও মন্থর হয়ে থাকবে তা হতে পারেনা। তাই আগে প্রতিবন্ধকতা দূর করার উদ্যমী স্বপ্ন দেখলেন তিনি।
“বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন রাষ্ট্র নায়ক তখন আমরাও বড় বড় স্বপ্ন দেখার প্রত্যয় অর্জন করি। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন আামাদের আরও বড় স্বপ্নের অভিযাত্রী করে তোলে।”
সিসিসি’র উদ্যোগে মাওয়া ঘাটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠান এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যেমে নগরীর বিভিন্ন স্থানে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে নগর পুলিশও শোভাযাত্রা আয়োজন করে। বেলুন উড়িয়ে এর উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। এতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা অংশ নেন।
সকালে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের পাশে জিমনেশিয়াম মাঠে বর্ণাঢ্য কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর জেলা শিল্পকলা ও শিশু একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বিকাল সাড়ে ৪টায় জিমনেশিয়াম মাঠে শুরু হয় কনসার্ট। ব্যান্ডদল আর্টসেল, তীরন্দাজ, নাটাই, সাসটেইন, সঙ্গীতশিল্পী বৃষ্টি মির্জা ও প্রমি কনসার্টে অংশ নেন। এরপর ছিল বর্ণিল আতশবাজি।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. বদিউল আলমের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, র্যাব-৭ এর অধিনায়ক কর্নেল ইউসুফ, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কবি আবুল মোমেন, চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহাবুবুল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস।
আরও খবর