চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪ সদস্যের কমিটি

আড়াই মাস আগে সমন্বয় সভা আর এরপর দফায় দফায় খালের বাঁধ অপসারণে সময় নির্ধারণ, এসবই দেখেছে চট্টগ্রাম নগরবাসী। তারপর বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে ডুবেছে নগরীর বড় এলাকা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2022, 03:46 PM
Updated : 22 June 2022, 03:46 PM

শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা প্রায় তিন দিন নগরীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভোগান্তি সওয়ার পর বুধবার টাইগার পাসে অস্থায়ী নগর ভবনে ‘জলাবদ্ধতার প্রকোপ নিরসনে করণীয় নির্ধারণে’ বিশেষ সভায় বসেন বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রধানরা।

সভায় নানা আলোচনা শেষে ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে চলতি বর্ষায় জনগণকে জলাবদ্ধতা হতে মুক্ত রাখতে করণীয় নির্ধারণ ও ব্যবস্থা গ্রহণে’ ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সভা শেষে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “এবার জলাবদ্ধতা বেড়ে গেছে, জনগণের ভোগান্তিটাও বেড়েছে। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ চলছে। একটা প্রকল্পের কাজ চললে স্বাভাবিকভাবে একটু ভোগান্তি হয়। প্রবল বর্ষণও হয়েছে।

“ভোগান্তিটা যখন বেড়ে গেছে,যা সকল কর্তৃপক্ষকে নাড়া দিয়েছে। তাই একযোগে সমন্বিতভাবে জনগণকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেবার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব।”

খালে থাকা বেশিরভাগ বাঁধ অপসারণের পরও কেন জলাবদ্ধতা হচ্ছে, তা নিরূপন ও নিরসনের জন্যই চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে বলে জানান মেয়র।

তিনি বলেন, “এই কমিটিকে সিএমপি, বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি, বন্দরের প্রতিনিধি সবাই সাহায্য করবে। কোথায় কী সমস্যা, বাঁধ এখনো রয়েছে বা পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা আছে উনারা এক সপ্তাহের মধ্যে পরিদর্শন করে বাধা অতিক্রমে পদক্ষেপ নিবেন। এটা ক্রাশ প্রোগ্রাম।”

কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে। তিন সদস্য হলেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো. শাহ আলী, সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক এবং সিসিসি’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটি সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী।

চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় জলমগ্ন বাসাবাড়ি।

সভার শুরুতে নগরীর ১৮টি খালে পানি চলাচলে ২০ প্রতিবন্ধকতার চিত্র তুলে ধরেন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক।

তিনি জানান, পতেঙ্গায় নির্মাণাধীন কর্ণফুলী টানেলের মুখে ৬০ ফুটের একটি খালকে ৩ ফুটের নালায় পরিণত করা হয়েছে। এছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপ ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ভিআইপি রোড সংলগ্ন একটি খালকে মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে।

মঙ্গলব ও বুধবার সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা সরেজমিন পরিদর্শনে প্রাপ্ত ছবি তুলে ধরা হয় সভায়। 

এতে দেখা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খালগুলোর প্রতিরোধ দেওয়াল নির্মাণে যে লোহারপাত পোঁতা হয়েছে, সেগুলো খালে রয়ে গেছে। এছাড়া নির্মাণকাজের জন্য ফেলা মাটিতে খাল ভরাট হয়ে আছে। খালের এ অবস্থার কারণে পানি নামতে পারছেন না বলে দাবি সিটি করপোরেশনের।

সভা শেষে মেয়র রেজাউল বলেন, “কাজ করতে গেলে বিভিন্ন বিঘ্ন আসে। খালে কিছু বাঁধ আছে। কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এগুলো সব পর্যালোচনা করেছি। সপ্তাহ-১০ দিনের মধ্যে যাতে একটা ফল আসে। এই জলাবদ্ধতা থেকে আমরা যাতে মানুষকে কিছুটা মুক্তি দিতে পারি।”  

সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরস্পরের প্রতি কোনো দোষারোপ করার সুযোগ নেই। জনভোগান্তিতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কী করা প্রয়োজন তা করাই আমাদের প্রধান কর্তব্য।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী, সিসিসির প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।

বন্দর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ, সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।