অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পাহাড় রক্ষার তাগিদ

পাহাড়ের মালিকানা থাকা সরকারি সংস্থাগুলো যাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ‍উদ্ধার হওয়া জমি রক্ষার উদ্যোগ নেয় সেই তাগাদা এসেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায়।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2022, 05:39 PM
Updated : 21 June 2022, 05:39 PM

মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কমিটির ২৪তম সভায় এই আহ্বান জানানো হয়।

সভায় পাহাড়ের অবৈধ বসতির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা চাওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

সভা শেষে বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, “কমিটি ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিত করেছে। যেসব পাহাড় ধসে পড়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের আগেই সরানো হয়েছিল। তারা আবার চলে আসেন।

“পাহাড়ে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেখানে যদি রাস্তা থাকে, বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে তাহলে মানুষ বসবাসে আকৃষ্ট হয়। আমরা ইতোমধ্যে অভিযানে ২০৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি।”

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “যারা এসব পাহাড়ের মালিক সেই সংস্থাগুলো যেন খালি হওয়া জমি নিজেদের দখলে রাখেন। যাতে নতুন করে কেউ বসতে না পারে।”

পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হালনাগাদ তালিকা এক মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।

আশরাফ উদ্দিন বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি অনুশাসন আছে। যারা ভূমিহীন তাদের পুনর্বাসন করা। এতদিন সমতলের লক্ষ লক্ষ ভূমিহীনদের জন্য ঘর করা হয়েছে। 

“এখন পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। আমরা হালনাগাদ তালিকা পাঠাব। সরকার যদি নির্দেশনা দেয় তখন জমি খোঁজার চেষ্টা করব। জমি দিলে যাদের ঘরবাড়ি নেই তাদের আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করা হবে।”

বিদ্যুৎ-পানিসহ সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিদুৎ মন্ত্রণালয়, কেবিনেট ডিভিশন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমরা লিখব। বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস সংযোগ না দিলে কেউ বসবাসে উৎসাহিত হবে না।”

সভায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (খুলশী) মো. শাহ রেওয়াজ মিয়া বলেন, “মতিঝর্ণা এলাকায় ৩০-৩৫ বছর ধরে বসবাস করছে। সেখানে আমাদের বৈধ কোনো সংযোগ নেই।

“কিন্তু সাব মিটার দিয়ে লাইন টেনে ১ হাজার মিটার দূর থেকেও সাইড কানেকশন নেওয়া হয়। দিনের আলোতে পাহাড় কেটে ২-৩ তলা ভবনও করা হয়। এমনও আছে স্থাপনা করার ২-৫ বছর এমনকি ৭ বছর পরও সংযোগ চায়।

“সেখানে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ বিষয়টাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হয়।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পাহাড়ে দখল স্বত্ত্ব দেখে আমরা সংযোগ দিতে পারি। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে এটা হয়। এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলাও আছে। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে আমরা নিয়মিত অভিযান করি।”

এসময় জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, “দখল স্বত্ত্বের কোনো বৈধতা নেই। এটা কোনো বৈধ মালিকানা নয়। সেখানে কিভাবে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে?”

বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, “এভাবে জমি হস্তান্তর বেআইনি। সেখানে সংযোগ দেওয়া যাবে কি না তা জানতে আমরা উচ্চ পর্যায়ে লিখব। প্রতিবছর বর্ষা আসলে টেনশন, উচ্ছেদের যুদ্ধ-বিগ্রহ। অনেক লোকবল লাগে।

“বর্ষায় পাহাড় ধসে প্রাণহানি হয়। তবে আমাদেরও ঘাটতি আছে। পাহাড়ে বসতি স্থাপনে শুরুতে আমরা কিছু করি না। ২-৫ বছর পর করি। তাতে তারা উৎসাহিত হয়। উচ্ছেদ খুব কঠিন। বসতে না দিলে সব থেকে ভালো।”

রেলের জমিতে ৩ হাজার স্থাপনা

গত ২৭ মার্চ গঠিত এ পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৩তম সভায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনার তালিকা চাওয়া হয়।

মঙ্গলবারের সভায় উপস্থিত পূর্ব রেলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী জানান, রেলের জমিতে তিন হাজার বসতি স্থাপনকারী আছে। তবে কয়টি পাহাড়ে এসব স্থাপনা তা তিনি জানাতে পারেননি।

জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, “উচ্ছেদ হওয়া পাহাড়গুলো মালিকরা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা লোকবলসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেব। পুলিশ সহায়তা দেবে। আপনারা খুঁটি দিয়ে ঘেরা দিন। বড় গাছ লাগান।”

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) তাদের মালিকানাধীন পাহাড়ে ১৩৫টি অবৈধ স্থাপনার কথা জানায়। তবে ওয়াসা তাদের ৫টি পাহাড়ে কোনো অবৈধ স্থাপনা নেই বলে জানায়।

নগরীতে বন বিভাগের কোনো পাহাড়ে অবৈধ বসতি নেই জানালেও উপজেলাগুলোর তালিকা তাদের কাছে নেই। সভায় সেসব উপজেলায় বন বিভাগের পাহাড়ে অবৈধ বসতির তালিকা করার সিদ্ধান্ত হয়।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী সাব্বির ইকবাল বলেন, “উপজেলায় অনেক পাহাড় কাটা হয়। পাহাড় ধসে মানুষের মৃত্যুও হয়। এরও তালিকা থাকা উচিত।”

বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, “বায়েজিদ লিংক রোডে ৯০ ডিগ্রি খাড়া পাহাড়। বর্ষায় ধসের আশঙ্কা আছে। স্লোপ কতটুকু রাখলে ধসে পড়বে না তা ঠিক করতে হবে।

“এত বিপদজনক অবস্থায় না রেখে কোন পর্যন্ত অপসারণ করতে হবে তা ঠিক করতে হবে। আমরা একটা কমিটি করছি। কমিটির প্রস্তাবনা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে পাঠানো হবে।

“ওনার অনুমোদন পেলে কেটে ঝুঁকিমুক্ত করা হবে। আইন মেনে করা হবে, যাতে কোনো সমস্যা না হয়।”

এ লক্ষ্যে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ১৩ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. মাসুদ কামালের সঞ্চালনায় সভায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাকির হোসেন খান, নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) আবদুল ওয়ারীশ, পরিবেশ অধিদপ্তর জেলার পরিচালক মুফিদুল আলম, নগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর