মঙ্গলবার নগরীর পানিবন্দি এলাকা থেকে দ্রুত পানি নামতে না পারার কারণ খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের সময় আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া বলে জানান তিনি।
নগরীর পশ্চিম বাকলিয়া, শান্তিনগর, চন্দনপুরা, কল্পলোক আবাসিক এলাকা ও চাক্তাই তক্তারপুল এলাকায় যান মেয়র।
তক্তারপুলে অপসারণ করা বাঁধ এলাকায় তিনি বলেন, “চকবাজার, ফুলতলা, বাকলিয়া, বহরদারহাট, খাজা রোড, পাঠানিয়াগোদা এলাকায় পানি না নামার মূল কারণ মানবসৃষ্ট বর্জ্যের কারণে খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া।
“এসব এলাকায় খালগুলো সিডিএ মেগা প্রকল্পের আওতাধীন হওয়া সত্ত্বেও জনদুর্ভোগ লাঘবে চটগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) খালগুলো থেকে আবর্জনা ও মাটি উত্তোলন করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল।
“কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে জনগণের অসচেতনতার কারণে বর্ষা শুরু হবার পূর্বেই পরিষ্কার করা এ খালগুলো আবার বর্জ্য ফেলার কারণে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।”
টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম বন্দর নগরীর খাল-নালা ও সড়ক উপচে শনিবার থেকে বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যেতে শুরু করে। বাসা-বাড়ি, দোকান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে পড়ে।
“যেখানে আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে সেক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতে কাউকেই ছাড় দেয়ার অবকাশ নেই।
“আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যাদের বাড়ির সামনে, দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে, ড্রেনে, খালে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দৃশ্যমান হবে তাদের বিরুদ্ধে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন প্রয়োগ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
যারা নগরীর নালা, খাল ও রাস্তাসহ যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে তাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওই আইনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুই বছরের জেল অথবা দুই লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে দায়ীদের বিরুদ্ধে এ আইন প্রয়োগ করতে আমরা বাধ্য হব। এখানে যে যত শক্তিধর হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে না।”
নাগরিক সেবা নিশ্চিত করাই সেবামূলক সংস্থাগুলোর মুখ্য কাজ উল্লেখ করে নগরীতে যেসব সেবা সংস্থা কাজ করছে তাদেরকে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান তিনি।
“চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খাল ও মাটি ভরাট করা হয়েছে। অনেকগুলো বাঁধ অপসারণ করা হলেও কিছু কিছু অংশে বাঁধ ও মাটির স্তূপ প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে রাখতে হয়েছে।”
এখানে কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “দুর্যোগ দুর্বিপাক যে কারণেই হোক না কেন আমাদের উচিত যার যার অবস্থান থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে তা মোকাবেলা করা।”
পানিবন্দি মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে মেয়র বলেন, “যারা পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্র, রান্না করা ও শুকনো খাবার সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করেছে।”
পানিবন্দিদের দুর্ভোগ লাঘবে যে কোনো সহায়তার জন্য কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত সিটি করপোরেশনের কর্মীদের সঙ্গে ০১৭১৭-১১৭৯১৩ ও ০১৮১৮-৯০৬০৩৮ নম্বরে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান তিনি।
মেয়রের সঙ্গে ছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরুল আলম, নাজমুল হক ডিউক, সংরক্ষিত কাউন্সিলর শাহীন আক্তার রোজী, নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম।