জলাবদ্ধ চট্টগ্রামে দিনভর চরম ভোগান্তি

টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম বন্দর নগরীর খাল-নালা ও সড়ক উপচে পানি ঢুকেছে বাসা-বাড়ি, দোকান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2022, 04:34 PM
Updated : 20 June 2022, 04:35 PM

বন্দরনগরীতে বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত শুক্রবার ভারী বর্ষণে রূপ নেয়। শনিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। রোববার জলাবদ্ধ এলাকার সংখ্যা বাড়তে থাকে।

রোববার রাতে জোয়ারের সময় নগরীতে অতি ভারি বর্ষণ হয়। এ সময় আরও নতুন নতুন এলাকা জনমগ্ন হয়। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে পানি জমে আটকা পড়ে ভারী যানবাহন।

সোমবার সকালে দুয়েকটি এলাকায় পানি কমলেও বেশিরভাগ এলাকায় দিনভর পানিবন্দি ছিল মানুষ।

আমবাগান আবহাওয়া অফিসে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

নগরীর ডিসি রোড, চকবাজার, বি এড কলেজ, ফুলতল, ঘাসিয়া পাড়া, শাহ মুহাম্মদ দরগার লেইন, বহদ্দারহাটের বারইপাড়া ও কাঁচাবাজার সংলগ্ন আবাসিক, খাজা রোড, বাদুরতলা, দেওয়ান বাজার মৌসুমি আবাসিক, কাতালগঞ্জ, দক্ষিণ পতেঙ্গা, উত্তর কাট্টলি হিন্দুর পাড়া, হালিশহরের শান্তিবাগসহ কয়েকটি এলাকা, পূর্ব বাকলিয়া এলাকায় সোমবার দিনভর জলাবদ্ধতা ছিল।

চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় জলমগ্ন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ি।

পোশাক কারখানার কর্মকর্তা খাজা রোডের বাদামতলী এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৫ বছর ধরে এই এলাকায় আছি। বৃষ্টি বেশি হলেই পানি জমে। এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ।”

শাহ মুহাম্মদ দরগার লেইনের বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, “পানির সঙ্গে যুদ্ধ করেই থাকতে হচ্ছে। গত রাত থেকে বাসার ভেতরে এক-হাঁটু পানি।”

বহদ্দারহাটের হক মার্কেটের দোকান মালিক শিবু দেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রবিবার থেকে আমার দোকানে পানি। বেচাকেনা সব বন্ধ। দোকানের মালামাল বাঁচানোই এখন কঠিন হয়ে গেছে।”

পূর্ব বাকলিয়ার আব্দুল মান্নান সওদাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচতলা সোমবার দুপুরে ছিল পানির নিচে।

এদিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার কাতালগঞ্জ এলাকায় ‘খান হাউস’ নামের একটি তিনতলা জলমগ্ন ভবনের নিচতলা থেকে আইপিএসের সংযোগ খুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওই ভবনের তত্ত্বাবধায়ক আবু তাহের (৬৫) ও গাড়ি চালক আবুল হোসেন (৩৮) মারা যান।

রাতভর ভারী বৃষ্টির পর সোমবার ভোরে পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর গ্রিন ভিউ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন চশমা হিলের পাহাড় ধসে টং দোকানে ঘুমিয়ে থাকা কিশোর রায়হান (১২) মাটি চাপায় মারা যায়।

নগরীর চকবাজার, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, বহদ্দারহাট ও চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দারা দিনভর হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ডিঙিয়ে চলাচল করেছেন।

বহদ্দার বাড়ি এলাকায় সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়িও ছিল কোমর পানির নিচে। সোমবার দুপুরে পানি ঠেলেই মেয়র জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শনে বের হন।

সিটি মেয়র রেজাউল বলেন, “জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম মহানগরীর বড় একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার মেগাপ্রকল্পের মাধ্যমে বিগত কয়েক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে।

“সিডিএ এ মেগা প্রকল্পের জন্য খালে যে বাঁধ দিয়েছিল তার বেশিরভাগই অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু নিম্নাঞ্চলে এখনো কয়েকটি বাঁধ থেকে যাওয়ায় দ্রুততার সাথে পানি অপসারণ হচ্ছে না। এতে বেশ কিছু এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সমস্যা থাকবে।

“বিশ্বের অনেক বড় বড় শহরে পানি উঠে, আবার তা সরেও যায়। আমরাও তেমনটা চাই। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়েছে যার কারণে উপকূলীয় শহর হিসেবে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ জোয়ারের পানি, এটাকেও ব্যাবস্থাপনায় আনতে হবে।”

চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকায় সড়কে পানির মধ্যে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন।

নগরীতে এক সময় ৭৬টি খাল ছিল উল্লেখ করে মেয়র বলেন, “এখন আছে ৫৭টি। অনেক খাল ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। সেই খালগুলো উদ্ধার করা দরকার। মেগাপ্রকল্প বহির্ভূত ২১টি খাল ভূমিদস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার করে খনন করার প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি।”

নগরীর জালালাবাদ, চাঁন্দগাও, পূর্ব ষোলশহর, শুলকবহর, লালখান বাজার, উত্তর আগ্রাবাদ ও দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে জলাবদ্ধ এলাকায় বাসিন্দাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান মেয়র।

সোমবার বিকেল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করে। বৃষ্টিপাতও কিছুটা কমেছে।

আমবাগান আবহাওয়া অফিসে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আরো দেড় মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আরও খবর