নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে: প্রতিযোগিতা কমিশন

দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে - এমন সতর্কতা জানিয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম বলেছেন, তারা এ বিষয়ে সচেতন এবং ব্যবস্থা নেবেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2022, 04:24 PM
Updated : 19 June 2022, 04:24 PM

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ‘ব্যবসা বাণিজ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিতকরণে অংশীজনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের ‘সাপ্লাই চেইনে’ সমস্যা হচ্ছে খুব। মধ্যসত্ত্বভোগীরা মুনাফার বিশাল অংশ নিয়ে যাচ্ছে। এতে উৎপাদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ডিলার, আড়তদার, পাইকাররা বাজার ম্যানুপুলেট করলে ব্যবস্থা নিতে চাই।

তিনি বলেন, “দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। আমরা এ বিষয়ে সচেতন আছি এবং অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

“ভোজ্যতেলের ৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। বাজারে যে অস্থিরতা এর জন্য কারা দায়ী তা আমরা জানতে চাই। উৎপাদনকারী নাকি পাইকার? এলসি চেক করলাম, দেশে প্রচুর তেল। কিন্তু দেখি বাজারে নেই। চালের ব্যপারেও আমাদের অনুসন্ধান চলছে।”

মফিজুল ইসলাম বলেন, “আমরা যেসব মামলা করেছি তার মধ্যে ৮০ শতাংশ সুয়োমোটো। ২০ শতাংশ মাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে। ব্যবসা প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করলে আমরা বিষয়গুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বা বিভাগের কাছে নিয়ে যেতে পারি।

তিনি বলেন, “কৃষক যে দাম পাচ্ছে না, সেটা নিয়ে কৃষক কিন্তু অভিযোগ করতে আসছে না যে- মূল্য পাচ্ছি না। মাঝখানে সিন্ডিকেট বা অন্য কেউ ব্যবসা করে যাচ্ছে। কৃষক লীগ বা কৃষকদের কোনো সংগঠন- তারা তো অভিযোগ নিয়ে আসতে পারে।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “যেসব সরকারি সংস্থার কাছে আমদানি পণ্যের তথ্য আছে তা উন্মুক্ত করা তাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআরকে আমরা অনুরোধ করব তথ্য ওপেন করতে।”

এফবিসিসিআইর পরিচালক ডা. মুনাল মাহবুব বলেন, “কৃষক ও বিপণনকারী বা বিক্রেতাদের মধ্যে দামের অনেক ফারাক। এতে কৃষকরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন।”

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “আমদানি পণ্যের তথ্য বন্দর, কাস্টমস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আছে। তারা সেগুলো উন্মুক্ত করতে পারে। আমরা চেম্বারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে ডাটাবেজ করব।

“মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা খুব জরুরি। এখানে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আমরা ভাবছি। প্রতিয়োগিতা কমিশনের জনবল তেমন নেই, বাড়ানো উচিত। আমাদের এসএমই খাতকে শক্তিশালী করতে হবে।”

মাহবুবুল আলম বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। বন্দরের কাজ নয় ট্যারিফ বাড়ানো। কিন্তু তারা ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এটাও কিন্তু ব্যবসায় অসম প্রতিযোগিতা।”

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, “মাঠ পর্যায়ে আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কোনো পণ্যের দাম বাড়ার আগে সেই পণ্য হঠাৎ করে বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

“অনলাইনে পণ্য কিনে অনেকে প্রতারণার শিকার হন বলে অভিযোগ আসে। এক্ষেত্রে মনিটরিং দরকার। প্রতিযোগিতা কমিশনের জেলা পর্যায়ে সভা করা দরকার।”

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, “ইভ্যালির বিরুদ্ধে প্রথম মামলা আমরা করি ২০২০ সালে। তারা ডিপ ডিসকাউন্ট দিয়ে ব্যবসা করছে। সেই মামলার তদন্ত শেষ। এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। কিন্তু উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় আমাদের মামলার কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে।

“সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে গেলেই যে বিজ্ঞাপন চলে আসছে, এটা অনেক দেশে বেআইনি। এ বিষয়ে কী করা যায় তা চিন্তা করছি।”

ব্যবসায়ী নেতা মাহফুজুল হক শাহ বলেন, “আমাদের এসএমই খাত প্রায় হারিয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো বড় ব্যবসায়ীদের এন্টারটেইন করলেও ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসায়ীদের সে সুযোগ দেয় না। নীতি পর্যায়ে পরিবর্তন না হলে কাজ হবে না।”

কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, “অভিযোগ কেন আসছে না সেটাও দেখতে হবে। কমপ্লেইন রেসপন্স মেকানিজম থাকতে হবে। পৃথিবীর সব দেশে কন্ট্রাক্ট ম্যানুফেকচারিং বৈধ অথচ বাংলাদেশে অবৈধ। রপ্তানিকারক নিজে উৎপাদক না হলে ইসনেসটিভ পাবে না।” 

অনুষ্ঠানে আমদানি ও এলসির তথ্য উন্মুক্ত করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাধে তামাক চাষ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, ব্যবসায়ী পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট না করে সার্ভিলেন্স অডিট চালু, খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারীদের সব লাইসেন্স এক জায়গা থেকে প্রদানের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব করেন ব্যবসায়ীরা।

সেমিনারে চট্টগ্রামের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিন এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।