মাদ্রাসায় ছাত্রের গলাকাটা লাশ: খুনের পেছনে ‘সেখানকারই ২ শিক্ষার্থী’

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর একটি মাদ্রাসায় সাত বছর বয়সী শিশুকে ওই মাদ্রাসারই দুই শিক্ষার্থী গলাকেটে খুন করেছে বলে দাবি পুলিশের।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2022, 02:39 PM
Updated : 19 June 2022, 02:39 PM

রোববার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম জেলার বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, নিহত কায়দা শাখার শিক্ষার্থী সাত বছর বয়সী ইফতেখার মালিকুল মাশফির জন্য বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খাওয়া নিয়ে অভিযোগের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

শনিবার এ দুই কিশোর শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। মাশফীকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিও রোববার উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিন বিকালে ওই দুই শিক্ষার্থীসহ সাক্ষী হিসেবে আরও দুই শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পরিদর্শক নেজাম উদ্দিন।

গত ৫ মার্চ সকালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ দরবার শরীফ পরিচালিত ‘আল্লামা শাহসূফী অছিয়র রহমান (ক.) মাদ্রাসা, হেফজখানা ও এতিখানার’ একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে উদ্ধার করা হয় কায়দা শাখার শিক্ষার্থী সাত বছর বয়সী মাশফির গলাকাটা লাশ; যাকে হত্যার পর লাশটি কম্বল মুড়িয়ে রাখা হয়েছিল।

পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাড়ির কাছে মাদ্রাসা হওয়ায় মাশফিকে প্রতিদিন খাওয়ার পাঠানো হত। যেগুলো ওই দুই কিশোর তার কাছ থেকে জোর করে খেয়ে ফেলত।

“বিষয়টি মাশফি তার বড় ভাইকে জানিয়েছিল। তার বড় ভাই সেটি মাদ্রাসার জাফর হুজুরকে অভিযোগ করলে তিনি ওই দুই জনকে বকাবকি করেন।“

এ নিয়ে ক্ষোভ থেকেই দুই শিক্ষার্থী মাশফিকে গলা কেটে খুন করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআইকে জানিয়েছে এ দুই কিশোর।

মাশফি খুনের পর তার মামা মাসুদ খান বাদী হয়ে বোয়ালখালী থানায় মামলা করেন। লাশ উদ্ধারের পর হাফেজ জাফর আহমদ, হাফেজ মো. রুস্তম আলী ও শাহাদাত হোসেন নামে ওই মাদ্রাসার তিন শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। তারা এখনও কারাগারে আছেন।

তিন মাস পর পিবিআই বলছে, ওই তিন শিক্ষকের কেউ নন- মাশফি খুন হয়েছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের হাতে।

পুলিশ সুপার নাজমুল জানান, বয়সে কিশোর হলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ওই দুই শিশু মানসিকভাবে খুব দৃঢ়। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তারা ছুরিটির রক্ত মুছে একটি পলিথিন মুড়িয়ে ট্রাঙ্কে রেখে দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে তারা মাদ্রাসায় থেকে প্রতিদিন শিক্ষা কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছিল।

খুনে জট খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, গত ১৪ জুন পিবিআইয়ের একটি দল ওই মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে। এরপর গত শুক্রবার সন্দেহভাজন এ দুই শিক্ষার্থীর নাম আসে।

এ নিয়ে অনুসন্ধানের পর আরও দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যায়। এরপর সন্দেহভাজন দুই জন এবং সাক্ষী দুই জনকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে দুই কিশোর শিক্ষার্থী।

বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক মন্তব্য করে পুলিশ সুপার নাজমুল বলেন, “কিশোর বয়সে তারা অপর এক শিশুকে নৃশংসভাবে খুন করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল। গ্রেপ্তার দুই জনের মধ্যে এক জনকে ১৫ জুন আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও সে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করেছে আমাদের।“

আরও পড়ুন: