ছাত্রলীগের বিরোধ: চুয়েটে স্নাতকের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারি এবং বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর স্নাতক পর্যায়ের ক্লাস ও পরীক্ষা ৭ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2022, 08:12 AM
Updated : 14 June 2022, 03:04 PM

পাশাপাশি স্নাতকের ছাত্রদের মঙ্গলবার বেলা ৫টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ছাত্রলীগের একটি অংশ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল বন্ধ করে দিলে ক্যাম্পাসে উত্তেজনার মধ্যে দুপুরে উপাচার্যের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘জরুরি সভায়’ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্নাতক পর্যায়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলেও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজপ্তিতে বলা হয়, “১৪ জুন থেকে আগামী ৫ জুলাই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম এবং আবাসিক হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হল।”

আপাতত ৫ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলেও এরপর শুরু হবে কোরবানির ঈদের ছুটি। ফলে ১৪ জুলাই ঈদের ছুটি শেষ হলে তারপর স্নাতকের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, প্রভোস্ট এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালক উপস্থিত ছিলেন ওই জরুরি সভায়।

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মো. রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কয়েক দিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে স্নাতক পর্যায়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্র ও ছাত্রীদের হল ছেড়ে যেতে আলাদা সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ক্লাস-পরীক্ষা চলবে।”

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাতে নগরীতে। সেদিন সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে চুয়েট ছাত্রলীগের একাংশ। তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়।

সেদিন রাত ৯টায় চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ছেড়ে যাওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু মিলাদ সেরে নেতাকর্মীরা সবাই পৌঁছাতে না পারায় বাস ৩০ মিনিট দেরিতে ছাড়তে বলে ছাত্রলীগের ওই অংশের অনুসারীরা।

ছাত্রলীগের অপর পক্ষ, যারা সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী, তারা তাতে আপত্তি তোলে। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। ফলে বাস ছাড়ে দেরিতে।

এর জেরে শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কুদরত এ খোদা হল এবং শেখ রাসেল হলের কয়েকটি কক্ষের তালা ভাঙা হয় পাল্টাপাল্টি হামলায়।

রোববার রাতে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয় লাঠিসোঁটা ও রামদা নিয়ে। তাতে কয়েকজন আহত হন।

সোমবার রাতে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। সবশেষ মঙ্গলবার ভোরে ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বরে লাঠি নিয়ে অবস্থান নেয় কিছু শিক্ষার্থী। তাদের বাধায় ক্যাম্পাস থেকে শহরের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে আসতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা এসব বাসে করেই ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন।

পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালের চেয়ে এখন পরিস্থিতি ভালো। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছে।”

ছাত্রলীগের দুই পক্ষ মারামারির ঘটনার জন্য পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। দুই পক্ষই মঙ্গলবার সকালে বাস বন্ধের ঘটনায় দায়ী করেছে ‘বহিরাগতদের’।

নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত চুয়েট শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইফফাত হক নিশান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবার রাতে শহর থেকে ফেরা নিয়ে ঘটনা শুরু হয়েছিল। এরপর সোমবার সারাদিন তেমন কিছু হয়নি।

“কিন্তু কাল রাত ২টার পর থেকে তারা আবার ইট-পাটকেল মারতে শুরু করে। এরপর ভোর ৪টার দিকে হলুদ হেলমেট পড়া ও হাতে রাম দা নিয়ে বহিরাগতরা আসে। তারা বাস চলচাল বন্ধ করে দেয়। তারা সকাল ৮টা পর্যন্ত গোল চত্বরে ছিল। সেখানে আমাদের কোনো ছাত্র ছিল না।”

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ এবং হল খালি করার নির্দেশ দেয় জানিয়ে নিশান বলেন, “শনি ও রোববার যা হয়েছে তা তেমন কিছু না। স্যাররা সবার সাথে বসলেই সমাধান হয়ে যেত।

“কিন্তু এরপর আজ কী হয়েছে, কেন হয়েছে বা কারা কী চাইছে তা বোধগম্য নয়।”

অন্যদিকে নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত চুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনাস মৃধা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শহরে সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির নিহতদের স্মরণ অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় কিছু অনুপ্রবেশকারী ঝামেলা শুরু করে। আমরা তখন নীরব ছিলাম।

“এরপর ক্যাম্পাসে ফিরেও শিক্ষকদের সহযোগিতা চেয়েছি। কিছু শিক্ষার্থী যারা ছাত্রলীগে গ্রুপিং এ বিশ্বাসী, তারা হলে হামলা চালায়। আমরা স্যারদের বারবার সব বিষয়ে জানিয়েছি। আজ ভোর ৪টার পর থেকে আক্রমণ শুরু হলে প্রশাসন ক্লাস-পরীক্ষা ও হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

বাস চলাচল বন্ধ কারা করেছে জানতে চাইলে আনাস মৃধা বলেন, “উচ্ছৃঙ্খল কিছু বহিরাগত ভোর থেকে এসব শুরু করে।”