ডিপোতে রাসায়নিক থাকা ডজনখানেক কন্টেইনার এখনো শনাক্ত করা যায়নি বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে বিএম ডিপোতে আগুন লাগে। সেখানে রাসায়নিক থাকায় দফায় দফায় বিস্ফোরণে ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
ভয়াবহ ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে জেলা প্রশাসন, যাদের মধ্যে নয়জনই ফায়ার সার্ভিস কর্মী।
দুইশর বেশি মানুষ এ ঘটনায় দগ্ধ বা আহত হয়েছেন, যাদের অনেকে এখনও হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন।
ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা মঙ্গলবার দুপুরেও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ওই কন্টেইনার ডিপোতে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, ডিপোর কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার তাদের জানিয়েছে, আগুন লাগার আগে সেখানে ২৭টি কন্টেইনারে রাসায়নিক ছিল। তবে রাসায়নিকের বিষয়ে এটাই চূড়ান্ত তথ্য কিনা, তা তারা নিশ্চিত করতে পারেননি।
রাসায়নিকের কন্টেইনারের মধ্যে আটটি পুড়ে গেছে এবং সাতটি শনাক্ত করে সরিয়ে রাখা হয়েছে বলে উদ্ধার কাজে নিয়োজিতরা জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তারা বলছেন না।
বিএম ডিপোতে থাকা ২৪ পদাতিক ডিভিশনের লেফট্যানেন্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম বেলা সোয়া ১১টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, “এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে। আর কোনো বিস্ফোরণ না হলে পরিস্থিতি আর খারাপ হবে না।”
রাসায়নিকের কত কন্টেইনার এখনো শনাক্ত হয়নি জানতে চাইলে আরিফুল ইসলাম বলেন, “কিছু কন্টেইনার এখনো শনাক্ত করা যায়নি। সেটা ১০টার বেশি হবে। এখানে অনেক ডকুমেন্ট পুড়ে গেছে। তাই ডিপোর লোকজনও সব তথ্য দিতে পারছেন না।
“ঢাকা থেকে আমাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল এসেছে। তারা ফাইনাল রিপোর্ট দেবে। কিছু কন্টেইনার থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। সেগুলোতে কাপড় আছে, পানি ছিটানোতে ধোয়া বের হচ্ছে।”
ডিপো কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, সেখানে মোট ৪৩০০ কন্টেইনার ছিল, যার মধ্যে ৩০০০ কন্টেইনার ছিল খালি। বাকিগুলোতে রপ্তানি বা আমদানি পণ্য ছিল।
বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুই কোম্পানির যৌথ বিনিয়োগে বেসরকারি এই ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোটি গড়ে তোলা হয় ২০১১ সালে। এর চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন নেদারল্যান্ডসের নাগরিক বার্ট প্রঙ্ক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশের স্মার্ট গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজের ছোট ভাই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমানও ডিপোর মালিকানায় আছেন। স্মার্ট গ্রুপের আরেক কোম্পানি আল রাজী কেমিকেল কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের পদে আছেন তিনি।
ওই রাসায়নিক কারখানায় উৎপাদিত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রপ্তানির জন্য রাখা ছিল কনটেইনার ডিপোতে। ওই রাসায়নিকই আগুনকে ভয়ঙ্কর রূপ দিয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা।
শনিবার রাতে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের কুমিরা ও সীতাকুণ্ডের দুটি ইউনিটের কর্মীরা তা নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে একের পর এক বিস্ফোরণ শুরু হলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থাও।
রোববার দুপুর থেকে আগুন লাগা অংশে থাকা অক্ষত কন্টেইনারগুলো আলাদা করা শুরু হয়। গভীর রাতে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
এরপরও সোমবার সকালেও আগের আগুনের স্থানগুলোর আশেপাশের কন্টেইনার ঘিরে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ডিপোর বিভিন্ন অংশে পাম্পের সাহায্যে আগুন জ্বলার স্থানগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পানি ছিটাতে দেখা গেছে।
সোমবার দিনভর আগুন নেভাতে কাজ চললেও পুরোপুরি নেভানো যায়নি। মঙ্গলবার সকালেও বিএম কন্টেইনার ডিপোর বিভিন্ন অংশ থেকে ধোয়া উঠতে দেখা গেছে।