আত্মসমর্পণের পর কারাগারে প্রদীপের স্ত্রী চুমকি

টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারণ অবৈধ সম্পদের মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2022, 06:23 AM
Updated : 29 May 2022, 02:01 PM

সোমবার তিনি চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।  

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত প্রদীপ কারাগারে থাকলেও তার স্ত্রী এতদিন পলাতক ছিলেন।

দুদকের করা এ মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও চুমকির বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।

সোমবার তদন্ত কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হল বলে দুদকের পিপি মাহমুদুল হক জানান।

তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাই ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের শেষ সাক্ষী। আগামী ২৯ মে আসামিপক্ষ তাকে জেরা করবেন। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব সমাপ্ত হবে। তারপর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ মামলাটি রায়ের পর্যায়ে যাবে।

এদিন শুনানির আগে প্রদীপকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে স্বামী ও স্ত্রী দুজনকেই পাঠানো হয় কারাগারে।

বেলা ১২টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত জামিন শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে স্ত্রীর সাথে প্রদীপকে একাধিকবার কথা বলতে দেখা যায়। এ সময় দুজনই বিমর্ষ ছিলেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “জামিন নামঞ্জুরের আদেশের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। চুমকি কারণ দেশেই ছিলেন। দেশে ছিলেন বলেই আজ আত্মসমর্পণ করেছেন।”

আদালকে প্রদীপ কুমার দাশ

২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে এপিবিএন চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় টেকনাফের ওসি প্রদীপকে কারাগারে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্তে নামে দুদক।

ওই বছর ২৩ অগাস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে মামলা করেন।

তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন এবং মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে।  

‘ঘুষ-দুর্নীতির’ অর্থে কীভাবে প্রদীপ তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন সম্পদ গড়েছেন, তার বিবরণ দেওয়া হয় মামলার এজাহারে। বলা হয়, প্রদীপ তার স্ত্রীকে কমিশন ব্যবসায়ী ও মৎস্য ব্যবসায়ী সাজিয়ে ‘অবৈধ সম্পদ বৈধ’ করার চেষ্টা করেছেন।

দুদকের অভিযোগ, প্রদীপ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকায় ছয়তলা বাড়ি করেন তার শ্বশুরের নামে। পরে তার শ্বশুর ওই বাড়ি তার মেয়ে চুমকিকে দান করেছেন বলে দেখানো হয়।

আয়কর রিটার্নে চুমকি কারণের কমিশন ব্যবসা এবং বোয়ালখালী উপজেলায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া পাঁচটি পুকুরে মাছের ব্যবসার যে আয় দেখানো হয়েছে, তাও স্বামী প্রদীপ দাশের ‘জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনের পর স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে দেখানো ভুয়া ব্যবসা’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল বলেন, "মাছ চাষের ব্যবসার যে হিসেব দেখানো হয়েছে, বাস্তবে তার অস্তিত্ব নেই বলে দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে।"

মামলা দায়েরের পর ২০২১ সালের ২৮ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সম্পদ বিবরণীতে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত অর্জন এবং হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয় সেখানে।

অভিযোগপত্রে প্রদীপের যেসব সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হল- নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনার গয়না, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারে ফ্ল্যাট।

গত ১৫ ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। চুমকিকে গ্রেপ্তারে সেদিন পরোয়ানা জারি করা হয়।

চুমকির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর তিন মাসের বেশি সময় পর আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন তিনি।

সিনহা হত্যা মামলার রায়ে প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকেও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে কক্সবাজার জেলা আদালত।