মিতু-বাবুলের সন্তানদের কেন পাচ্ছে না পিবিআই?

আদালতের একাধিকবার নির্দেশের পরও মাহমুদা আক্তার মিতু ও বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পায়নি হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2022, 07:07 AM
Updated : 14 May 2022, 07:19 AM

আদালতের নির্দেশেও তাদের হাজির না করায় মিতুর দুই সন্তানের নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাদের নানা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।

১৩ বছরের ছেলে এবং ৯ বছরের মেয়েটি এখন বাবুলের পরিবারের হেফাজতে রয়েছে।

বাবুলের ভাই হাবিবুর রহমান বলছেন, আদালত প্রবেশন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শিশু দুটিকে মাগুরা গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আদেশ দিলেও তদন্ত সংস্থা তা মানেনি।

ছয় বছর আগের মিতু হত্যা মামলার তদন্তে গত বছর নাটকীয় মোড়ের পর এখন স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

২০১৫ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামে যখন সড়কে খুন হয়েছিলেন মিতু, তখন তার সঙ্গেই ছিল বড় ছেলেটি। সে কারণে তার সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তদন্তকারীদের কাছে।

তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদে অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করি। আদালত ১৫ দিনের মধ্যে বাচ্চাদের হাজির করতে আদেশ দেন।

“এই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী এই শিশুরা। অনেকদিন আগেই মৌখিকভাবে শিশুদের হাজির করতে আমরা বাবুলের পরিবারকে বলেছি। কিন্তু তারা করেনি। সর্বশেষ আদালতের আদেশের পরও তারা তা বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করল।”

এখানেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন মাহমুদা আক্তার মিতু। ফাইল ছবি

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি দেওয়া এক আদেশে ১৫ দিনের মধ্যে মিতু-বাবুল দম্পতির দুই শিশু সন্তানকে তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) কাছে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।

এরপর ওই আদেশের বিরুদ্ধে বাবুলের ভাই হাবিবুর রহমান একটি রিভিশন আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মিতু-বাবুলের দুই সন্তানকে শিশু আইন মেনে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।

এরপর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন হাবিবুর।

তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর বলেন, “বারবার এই মনোভাব প্রমাণ করে এমন কিছু আছে, যাতে বাচ্চাদের সাথে কথা বললে বাবুল আক্তার দোষী তা প্রমাণ হবে।”

ইতোপূর্বে পিবিআই মাগুরা এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরে গিয়েও শিশু দুটির দেখা পাননি জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা শঙ্কিত। তারা কোথায়, তা আমরা কেউই জানি না।

“এমনকি মিতুর পরিবারের সাথেও বহুদিন তাদের দেখা হয়নি। বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে যে আমাদের আশঙ্কা, সেটা আমরা আদালতকে জানাব।”

মিতুর বাবা সাবেক ‍পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার পর প্রায় ছয় বছর পেরিয়েছে। এক বছর নাতি-নাতনি আমাদের সাথে ছিল। এরপর আর দেখিনি।

“যেহেতু তাদের মা বেঁচে নেই, বাবা জেলে, তাই আইন অনুসারে আমরা কাস্টডি দাবি করে ঢাকা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আবেদন করেছিলাম।। বিবাদী করেছিলাম বাবুলের বাবা, ২ ভাই, ১ বোন ও নতুন স্ত্রীকে। তখন বাবুলের ভাই আদালতে হাজির হয়ে বলেছিল, ‘আমার বাবার কাছে আছে’। আদালত বিবাদীদের এবং শিশুদের হাজির হতে বলেছিল। কিন্তু বিবাদীরা হাজির হয়নি।”

মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন ও মা সাহেদা মোশাররফ নীলা। ফাইল ছবি

ওই মামলায় ১৮ মে শুনানির দিন ধার্য আছে জানিয়ে মিতুর বাবা বলেন, “সেদিন সব জানিয়ে আবার আবেদন করব।

“ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী মিতুর ছেলে। হত্যাকারীদের নাম বলতে না পারলেও চেহারা তো বলতে পারবে। ঘটনা ছেলে আদালতে বলে দিতে পারে, সেজন্য হয়ত আড়াল করছে।”

পুলিশ সুপার বাবুল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বদলি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

তখন ঢাকায় থাকা বাবুল চট্টগ্রামে ফিরে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় মিতুর বাবার বাড়িতেই উঠেছিলেন তিনি।

কয়েকমাস পর বাবুলকে ঢাকায় জিজ্ঞাসাবাদের পর নাটকীয় পরিস্থিতিতে পুলিশের চাকরি ছাড়েন বাবুল। পরে সন্তানদের নিয়ে আলাদা বাসায় থাকা শুরু করেন। পরে বিয়েও করেন।

পিবিআই মামলাটির তদন্তে আসার পর আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে স্বয়ং বাবুলের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা জানায়। 

এরপর গত ১২ মে বাবুলের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। সেদিনই বাবুলসহ নয়জনকে আসামি করে নতুন হত্যামামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ।

কিন্তু মামলা জটিলতায় গত ২৫ জানুয়ারি মোশাররফের করা মামলায় আবার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ৬ মার্চ সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আদালত। এখন নিজের করা মামলাতেই গ্রেপ্তার আছেন বাবুল।

গ্রেপ্তার বাবুল আক্তার। ফাইল ছবি

বাবুলের ভাই আইনজীবী হাবিবুর রহমান লাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালত আগে প্রবেশন অফিসারের উপস্থিতিতে শিশু আইন মেনে বাচ্চাদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছিল। তখন বলার পরও পিবিআই সেই আদেশ মেনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।

“আবার তারা কেন শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। চট্টগ্রামের আদালতে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে যে আদেশ দিয়েছে, সে বিষয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছি তা শুনানির অপেক্ষায় আছে।”

শিশু দুটি বাবুলের বাবার সঙ্গে মাগুরার বাড়িতে আছে বলে জানান হাবিবুর।

বাবুলের বাবা আব্দুল ওয়াদুদও একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক।

এই সংক্রান্ত পুরনো আরও খবর