চট্টগ্রাম কলেজে স্মৃতির ঝাঁপি মেলে ধরা দিন

শিক্ষকদের কাছে পেয়ে শ্রদ্ধায় নত হয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা আর আড্ডায় মেতে উঠেন সতীর্থরা। সব মিলে অতীতের স্মৃতিচারণে মুখর হয়ে উঠে বন্দর নগরীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2022, 12:26 PM
Updated : 13 May 2022, 12:27 PM

নগরীর নেভি কনভেনশন সেন্টারে কলেজের ‘প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পুনর্মিলনী ২০২২’ এর আয়োজনে অংশ নেন ২ হাজার দুইশ প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বহু বছর পর দেখা হয় ছাত্র-শিক্ষকদেরও।

শুক্রবার সকাল ৯টায় পুনর্মিলনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন কলেজের সবচেয়ে বর্ষীয়ান সাবেক শিক্ষার্থী অধ্যাপক চিত্ত প্রসাদ তালুকদার, তিনি চল্লিশের দশকের শিক্ষার্থী।

অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনের অনেকটা সময় ধরে শিক্ষক চিত্ত প্রসাদ তালুকদারকে ঘিরে ছিলেন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা। হুইল চেয়ারে বসা বর্ষীয়ান এই শিক্ষককে এসময় মঞ্চে তুলে দেন ছাত্রছাত্রীরা।

কাঁপা গলায় তিনি বলেন, “প্রিয় চট্টগ্রাম কলেজে আমি চার বছর লেখাপড়া করেছি। ১৯৪২ সালে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হই। ১৯৪৬ সালে বিএ পাস করি। এখন হাঁটতে পারি না। দাঁড়াতেও পারি না। আমার একজন সঙ্গীকেও আজ আর দেখছি না।

“ছাত্ররা অনেকেই আছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অধ্যক্ষও হয়েছিল। তাদেরও দেখছি। ছাত্রজীবনে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের ভালোবাসা পেয়েছি। আর আজ ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসা পেয়ে আমি মুগ্ধ।”

পেশাজীবনে চিত্ত প্রসাদ তালুকদার সরকারি কমার্স কলেজে ১৯৬২ থেকে ৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজেরও অধ্যক্ষ ছিলেন।

সাবেক শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “স্যারের সাথে বহু বছর পর দেখা হল। ওনাকে দেখে খুব ভালো লাগছে। উনিও আমাদের কাছে পেয়ে ভীষণ খুশি।”

সাবেক শিক্ষার্থী মো. ইউসুফ বলেন, “আজ অনেক হারানো বন্ধুর খোঁজ মিলেছে। মনের কথা বলেছি পরস্পরকে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেকে এসেছে। আবার সবার মাঝে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপিত হল।”

নেভি কনভেনশন সেন্টারে কলেজের আবহ আনতে প্রশাসনিক ভবন, রেড বিল্ডিংসহ বিভিন্ন ভবনের বিশাল আকারের ছবি স্থাপন করা হয়। সেসব ছবির সামনে সাবেক শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে ছবি তুলেছেন কিংবা আড্ডায় মেতেছেন সতীর্থরা।

পুনর্মিলনীর আয়োজনে বিকেলের অধিবেশনে কৌতুক পরিবেশন, কুইজ প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠ ও গল্প বলা, কলেজ বন্ধুদের পরিবেশনায় গানের আয়োজন রাখা হয়।

অনুষ্ঠানে অতীতের স্বর্ণালী দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেন সাবেক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইসমাইল খান, সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম।

এছাড়া বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শিল্পগোষ্ঠী একে খান গ্রুপের সালাউদ্দিন কাশেম খান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. আবদুল করিম, সাবেক সচিব মো. নাসির উদ্দিন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহফুজা আখতার, দৈনিক পূর্বকোণ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. জসিম উদ্দিন চৌধুরী, লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়াসহ অনেক শিক্ষার্থীও তাদের সময়ের কথা জানান।

সকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আহমদ কায়কাউস। পুনর্মিলনী আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী আলী আহমদ ও সদস্য সচিব এস এম আবু তৈয়ব বক্তব্য রাখেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক একরামুল করিম।

অনুষ্ঠানে ‘অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ স্মারক বক্তৃতা’ দেন চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল হাসান।

পুনর্মিলনীতে উপস্থিত ছিলেন ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু সিকান্দার খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মোহিত উল আলম, বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক হাসিনা জাকারিয়া বেলা, অধ্যক্ষ আনোয়ারা আলম, আইনজীবী আবুল হাশেম, ডা শেখ শফিউল আজম।

শিক্ষার্থীদের উৎসবের এই দিনে সন্ধ্যায় ছিল অতিথি শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনা।