পাহাড়তলীর ফরিদ হত্যা: ১১ আসামির দুজন গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে মোটর মেকানিক মো. ফরিদকে হত্যার ঘটনায় পরিবারের করা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2022, 09:21 AM
Updated : 9 May 2022, 09:41 AM

ফরিদের বোন মোসা. রাশেদা আক্তার রোববার রাতে ডবলমুরিং থানায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ওই মামলা করেন বলে ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান।

এজাহারে নাম থাকা আসামিরা হলেন: আলাউদ্দিন আলো, দিদারুল আলম ওরফে টেডি দিদার, মো. শাহজাহান, আলাউদ্দিন ওরফে মনা, হৃদয় ওরফে চেরাগ আলী, আলী আজগর লেদা, মো. সোহাগ,  মো. ফেরদৌস, মো. সালাউদ্দিন, মো. আল আমীন, ও নাজিম উদ্দিন রাশেদ।

তাদের মধ্যে দিদার (৩৫) ও হৃদয়কে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫- ১৬ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, এই ১১ আসামির মধ্যে দিদার ছাড়াও মনা, ফেরদৌস, আল আমীন ও রাশেদ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেল হত্যা মামলারও আসামি।

এজাহারে হামলার উসকানিদাতা হিসেবে চশমা ফারুক ও গিয়াস উদ্দিন নামে আরও দুজনের নাম থাকলেও তাদের আসামি করা হয়নি।

নিহত মো. ফরিদ (৪৫) পাহাড়তলী রেলওয়ে কলোনিতে একটি মোটর ওয়ার্কশপ চালাতেন। শনিবার রাতে পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদের কাছে তাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরে ভোররাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপালাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ওসি কাশেম ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাহাড়তলী রেলওয়ে কলোনীতে ফরিদের একটি গাড়ি পরিষ্কার করার দোকান আছে। পাশাপাশি রেলওয়ের জায়গায় দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি।

“এজাহারে বলা হয়েছে, ভাড়ার টাকা আদায় নিয়ে আলো ও টেডি দিদারের সাথে ফরিদের বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের কারণে বিভিন্ন সময়ে টাকা দাবি করছিল আসামিরা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে বিভিন্ন সময়ে ফরিদকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল তারা। এরপর ফরিদের ওপর পরিকল্পিত হামলা করা হয়।"

পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ ও ব্যবসায়ীরা সে সময় বলেছিলেন, বাজারের লোকজন ‘চাঁদাবাজি’তে অতিষ্ট হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু পরিবারের দাবি মহিউদ্দিনকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ পিটিয়ে খুন করা হয়। 

ওই মামলার ৫ আসামিকে এখন ফরিদ হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, রেলের জায়গা ‘বরাদ্দ নিয়ে’ সেখানে দোকান ও ঘর নির্মাণ করায় ফরিদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হচ্ছিল। টাকা না দেওয়ায় এবং আদালতে মামলা করতে চাওয়ায় তাকে পিটিয়ে খুন করা হয়।

নিহত ফরিদ এবং তার উপর হামলকারীরা সবাই স্থানীয় বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত বলে পুলিশকে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন।

তাদের ভাষ্য, ফরিদ এবং তাকে পেটানো ব্যক্তিরা এক সময় একপক্ষেই ছিলেন। পাহাড়তলী এলাকার সাবেক এক জনপ্রতিনিধির হয়ে কাজ করতেন তারা। তবে তিন বছর আগে ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেল হত্যাকাণ্ডের পর তার সহযোগী অনেকেই আসামি হয়ে ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়ে।

সম্প্রতি সোহেলের নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু জায়গা ফরিদ দখলে নিয়ে দোকান ও ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিলে তাদের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে।

শনিবার রাতে ফরিদের উপর হামলার সময় তার সঙ্গে ছিলেন আলমগীর মানিক নামে তার এক বন্ধু।

তিনি বলেন, “চাঁদা দাবির অভিযোগে ফরিদের সঙ্গে আমিও তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে গিয়েছিলাম কয়েকদিন আগে। আমাদের উকিল বলেছিল আজকে (রোববার) যেতে। আজকে আমাদের আদালতে যাবার কথা ছিল আলোদের বিরুদ্ধে মামলা করতে। তার আগেই ফরিদকে খুন করা হল।”