চেরাগী মোড়ে ছাত্রলীগকর্মী খুনের পেছনে ‘কিশোরদের মারামারি’

নগরীর জামালখান মোড়ে কিশোরদের দুটি দলের সদস্যদের মধ্যে দুইদিন আগে একজনকে ‘চেয়ার ছুড়ে মারার বদলা’ নিতে গিয়ে খুন হয়েছেন ছাত্রলীগকর্মী আসকার ইবনে তারেক ইভান বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2022, 01:21 PM
Updated : 23 April 2022, 02:34 PM

এলাকার আধিপত্য বিস্তারে স্থানীয় দুই দল কিশোরের মধ্যে প্রায়ই লেগে থাকা বিবাদ এবং মারামারির জের ধরেই শুক্রবার রাতে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে আবার মারপিটে জড়ায় তারা।

এসময় আজাদী গলির ভেতরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিএএফ শাহীন কলেজের দ্বাদশ বর্ষের শিক্ষার্থী ইভান (১৮)।

বিবাদমান দুটি দলের মধ্যে একটি কিশোর দলের এ সদস্য জামালখান এলাকায় ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে পরিচিত হলেও কোনো কমিটিতে ছিলেন না।

এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে জামালখান ও চেরাগী পাহাড় এলাকার অপর কিশোর দলের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ কমিশনার জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুইদিন আগে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরে শুক্রবার রাতের মারামারি সূত্রপাত।

“নগরীর জামালখান এলাকায় দুইদিন আগে রাতের বেলা সিটে বসা নিয়ে মারামারি বাধে ইভান ও ধ্রুব নামের দুইজনের মধ্যে। ওইসময় ইভান চেয়ার ছুড়ে মারে ধ্রুবকে। এর জের ধরে ধ্রুব ও তার পক্ষের ছেলেরা শুক্রবার রাতে অমিত নামে ইভানের পক্ষের একজনকে মারধর করে।“

অমিত চিকিৎসা ও মামলার জন্য থানায় যেতে চাইলে তাকে আটকানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর দুইপক্ষের মধ্যে আবার মারামারির ঘটনা ঘটে।

এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ইভানকে ছুরিকাঘাত করা হয় বলে পুলিশের ভাষ্য।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুরুতে ইভানকে চেরাগী পাহাড় মোড়ের আজাদী গলি সংলগ্ন রাজাপুকুর লেইনের ভেতরে নিয়ে গিয়ে কয়েকদফা ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তাকে চেরাগী পাহাড় মুখে এনে পুনরায় পেটানো হয়।

পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। নিহত ইভান নগরীর এনায়েত বাজার এলাকার জিমিরউদ্দিন ম্যানশনের এসএম তারেকের পুত্র।

শুক্রবার রাতে এ হত্যাকাণ্ডের পর প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, পূর্ব শত্রুতার জেরে একটি পক্ষ ইভানকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

চেরাগী মোড়ের যে স্থান ইভানকে ছুরিকাঘাত করা হয় ওই গলির প্রবেশ মুখেই ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের বাড়ি।

বিবাদমান কিশোর দল দুটির একটির পেছনে রয়েছে এ কাউন্সিলরের অনুসারী ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। আরেকটির পেছনে রয়েছেন সাব্বির সাদিক নামে ছাত্রলীগের পরিচয়দানকারী আরেকজন।

নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার সাদিক নিজেকে মহানগর ছাত্রলীগের নেতা দাবি করে এলাকায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে। তার অনুসারী কিছু কিশোর-তরুণ রয়েছে, যারা বিভিন্ন এলাকায় অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বলে এলাকাবাসীর ভাষ্য।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাব্বির সাদিক নামে আমাদের কোন নেতা নেই, তবে সে নিজেকে মহানগর ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়। এছাড়া মারা যাওয়া ইভানও ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে নেই।“

পুলিশ কোনো পক্ষের কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও কিশোরদের দুইপক্ষের আগের শত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছে।

শনিবার দুপুরেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে উপ কমিশনার জসিম বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

“আমরা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছি, ডিজিটালি যাচাই বাছাই করেছি, হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে।“

এক ‘কিশোরকে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেও এ হামলার ঘটনায় কিছুটা আহত এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। আমরা ইতিমধ্যে এ ঘটনার সাথে যুক্ত চারজনকে চিহ্নিত করেছি। তাদের নাম ও ঠিকানা আমরা পেয়েছি। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।“

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ ঘটনার সঙ্গে যুক্তরা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত কি না তা এখনও জানি না।“

কিশোর দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব কি না জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে বিভেদের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। কী জন্য হয়েছে আমরা দেখছি। কারা এর নেতৃত্বে ছিল তা আমরা তদন্ত করে দেখছি।

কিশোর দলের অপতৎপরতা ‍নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে দাবি করে তিনি বলেন, রমজানের সময় ইফতারের পর সকলে চা খেতে চায়। কিন্তু ইদানিং সময়ে কিছু উঠতি ছেলে মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়া চলাচল করে অপরাধ করে। এসব ঘঠনা বন্ধের জন্য পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে।

চেরাগী পাহাড় এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগে এখানে সংবাদকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী ও সাহিত্যসেবীরা নিয়মিত আড্ডা দিতেন। সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর দলের ‘দৌরাত্ম্য’ বাড়ার পর থেকে এ এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই অনেকেই এ এলাকা এড়িয়ে চলেন।

হত্যার ঘটনায় মামলা

নিহত ইভানের বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ তারেক বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় খুনের ঘটনায় আটজনকে আসামি করে শনিবার মামলা করেছেন।

কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার মুজাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একজন গ্রেপ্তার আছেন।

শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার ওই কিশোর ছাড়াও আসামিদের মধ্যে আরেকজন কিশোর রয়েছেন।

অন্য আসামিরা হলেন-  ধ্রুব (২০), প্রান্ত (২০), শ্রাবণ (২০), শচীন (২০), রুবেল দত্ত (২০) ও অর্ক (২০)।