চট্টগ্রামে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতারা

চট্টগ্রামের লালখান বাজারের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আবুল হাসনাত মো. বেলালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2022, 09:47 AM
Updated : 2 April 2022, 09:47 AM

শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনে বেলালের বিরুদ্ধে ‘ভাবমূর্তি নষ্ট’, ‘অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন’, ‘নেতাকর্মীদের নিপীড়ন’ ও ‘টিসিবির পণ্যের কার্ড বিতরণে অনিয়মসহ’ নানা অভিযোগ তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম ও তার অনুসারী ইউনিটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না। মাসুম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও ছিলেন শ্রোতার সারিতে।

দীর্ঘদিন ধরে ‘কর্তৃত্ব নিয়ে’ বেলাল ও মাসুমের মধ্যে এলাকার বিরোধ চলে আসছে। এর মধ্যে ২৭ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুইজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।

পরদিন ২৮ মার্চ তাদের অনুসারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ নেতা মাসুমের কুশপুতুলও দাহ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লালখান বাজার ওয়ার্ডের ‘গ’ ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমীর কান্তি দে বলেন, “এই এলাকার কাউন্সিলর (বেলাল) ও তার বাহিনী জনগণের মাঝে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার মিশন হিসেবে দলীয় নাম ও পদবি ব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থবিত্ত গড়ছে।

“চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ডের নিকট ভুয়া তথ্য দিয়ে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নেয়। জনগণকে ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে বোকা বানিয়ে এবং ভোটারদের ভয় ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে কাউন্সিলর বনে যায়।”

কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর বেলাল আরও ‘বেপরোয়া’ হয়ে উঠেছে অভিযোগ করে সমীর বলেন, “দলীয় নেতাকর্মীদের নিপীড়ন-নির্যাতন এবং গত এক বছরের এক ডজনের বেশি মামলা করিয়েছেন।”

‘গ’ ইউনিটের সভাপতি নুরুল আলম বলেন, “কাউন্সিলর হওয়ার পর তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। উনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি পদে আছেন। উনাকে তো আওয়ামী লীগের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

“লালখান বাজার এলাকার অধিকাংশ দরিদ্র পরিবার টিসিবির পণ্যের জন্য কার্ড পেতে বারবার ওয়ার্ড অফিসে ধন্না দিলেও পায়নি। ২৭ মার্চ ইস্পাহানি মোড়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের চাপের মুখে সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম প্রকাশ্যে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানান।”

নুরুলের ভাষ্য, “ওই সময় কাউন্সিলর বেলাল সবার উপস্থিতিতেই ‘অশোভন আচরণ’ ও ‘হুমকি’ দেন। পরদিন তার উপস্থিতিতে মাসুমের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। অঙ্গ সংগঠনের নেতা হয়ে তিনি কীভাবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগকে পরিচালিত করতে চান?”

সংবাদ সম্মেলনে ‘ক’ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন হিরণ, ‘খ’ ইউনিটের সভাপতি এস এম ইব্রাহিম, সাধারণ সম্পাদক আসলাম হোসেন মাসুম উপস্থিত ছিলেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর বেলাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব তথ্য প্রমাণ যাচাই ও বিগত দিনের কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে, যোগ্য মনে করেই দলের হাইকমান্ড আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে।

“ভোটের দিন লালখান বাজারে কী পরিস্থিতি ছিল সেটা আপনারা সবাই জানেন। ইভিএমে কি ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট নেওয়া যায়? উনারা তো দল করেন। উনারাও তো দলের প্রার্থী হিসেবে আমাকে ভোট দিয়েছেন।”

টিসিবি পণ্যের কার্ড বিতরণ বিষয়ে বেলাল বলেন, “ইউনিট কমিটির নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এসব ইউনিট নিয়ে রিভিউ কমিটির কাছে অভিযোগ আছে। এখনো এগুলো অনুমোদিত নয়।

“এরপরও প্রতি ইউনিট কমিটির সুপারিশ মতে ১০০টি করে মোট ৩০০ কার্ড দেওয়া হয়েছে। এরপর আর কী বলার থাকে?”

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থক যারা আমার হয়ে নির্বাচনে কাজ করেছেন তাদের দলের সদস্য ফরমই দেওয়া হয়নি। তাদের কী আওয়ামী লীগ করার অধিকার নেই?

“২০০৩ সালে দলের কঠিন দুঃসময়ে মাসুম যখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান, তখন আমি এলাকায় দলকে সংগঠিত করেছি। এলাকায় যার সাথেই উনার (মাসুম) বিরোধ হয়েছে, তাকেই এলাকা ছাড়তে হয়েছে। সম্মেলন ছাড়াই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়েও তিনি সাধারণ সম্পাদক পদবী ব্যবহার করছেন।”