শিশু আরাফ হত্যার রায় পেছালো

চট্টগ্রামের শিশু আবদুর রহমান আরাফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা পিছিয়ে গেছে বিচারকের ব্যস্ততার কারণে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2022, 06:33 AM
Updated : 30 March 2022, 08:25 AM

বুধবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে এ মামলার রায় হওয়ার কথা ছিল। এ মামলার তিন আসামিও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

তবে বিচারক রায় পিছিয়ে ২৮ এপ্রিল নতুন তারিখ ঠিক করে দেন বলে এ আদালতের পিপি প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য জানান।

তিনি বলেন, “আজ হাই কোর্ট থেকে দুজন বিচারপতি চট্টগ্রাম আদালতে এসেছেন। উনাদের সাথে বিচারকদের সভা আছে। এ কারণে বিচারক ব্যস্ত থাকবেন। সেজন্য রায় ঘোষণার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।”

২০২০ সালের ৬ জুন বিকেলে নগরীর বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে একটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয় দুই বছরের শিশু আরাফকে।

ওই ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় মিয়াখান নগরের বাসিন্দা মো. ফরিদ, শিশু আরাফের পরিবার যে বাড়িতে ভাড়া থাকত সেই ভবনের দারোয়ান মো. হাসান ও হাসানের মা নাজমা বেগমকে। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

ঘটনার দিন বিকালে মিয়াখান নগরে ভবনের সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় খেলছিল শিশু আরাফ। মায়ের কাছে চানাচুর খাওয়ার পর সে পানি খেতে চেয়েছিল। এ সময় আরাফের মা ফারহানা ইসলাম পানি আনতে ঘরের ভিতরে যান।

তিনি ফিরে এসে দেখেন ছেলে নেই। এ ফাঁকে আদর করার ছলে আরাফকে নিয়ে ভবনের ছাদে চলে যান নাজমা বেগম। সেখানে পানির ট্যাংকে ফেলে আরাফকে হত্যা করা হয়।

হত্যার পর ভবনটির বাসিন্দা নাজমা বেগম, তার ছেলে বাড়ির দারোয়ান হাসান ও তাদের পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

তখন নাজমা বেগম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে প্রতিবেশীর শিশুকে আদর করার ছলে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করেন ।

নাজমা আদালতে দেওয়া জবানবন্দি বলেছিলেন, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার সময় নাজমার ছেলে হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করেছিলেন।

১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা ওই ভবনের মালিক। তাকে ‘মামলায় ফাঁসাতে’ ওই ভবনের বাসিন্দা কোনো শিশুকে হত্যা করতে নাজমাকে ২০ হাজার টাকার লোভ দেখান ফরিদ।

ফরিদ বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী ছিলেন। ঘটনার আগে কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভবন মালিক নুরুল আলম মিয়ার প্রচারে হামলার ঘটনায় ফরিদকে আসামি করা হয়েছিল। এ কারণে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন।

একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আবদুল কাইয়ুম ও গৃহিনী ফারহানা ইসলাম দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল আরাফ। ছেলে হারানো মা-বাবার দাবি, তাদের সন্তানের হত্যাকারীদের যেন সর্বোচ্চ সাজা হয়।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২০ জনের সাক্ষ্য এবং আসামি পক্ষে ১০ জনের সাফাই সাক্ষ্য হয়েছে। তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।