কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের কর্মসূচি থেকে সরলো বিএনপি

কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি থেকে সরে পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2022, 06:00 PM
Updated : 26 March 2022, 06:00 PM

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণার পর শনিবার রাত সাড়ে ১০টার পর কর্মসূচির স্থান পরিবর্তনের বিষয়টি নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবু সুফিয়ানসহ দলের একাধিক নেতা নিশ্চিত করেন।

রোববার দুপুর ২টায় নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের বিপরীতে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি।

আর পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ‘মিথ্যা ঘোষকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন’ ঠেকাতে রোববার সকাল থেকেই সেখানে অবস্থানের কথা জানায় আওয়ামী লীগ।

তবে উভয় দলকেই সেখানে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান।

এরপর রাতে সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানিয়ে নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, “গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের মত কোনো পরিবেশ-পরিস্থিতি দেশে নেই। বিপ্লব উদ্যানেও অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়েছিলাম, দেয়নি। এখন আমরা পলোগ্রাউন্ডে জনসভা রেখেছি।

“এক সপ্তাহ আগে আমরা কর্মসূচি ঘোষণার পর হঠাৎ আওয়ামী লীগ অনুষ্ঠান দিল। এটা কেমন কথা? আমরা কোনো অনুষ্ঠানে একটা মাইক বাঁধারও অনুমতি পাই না। এভাবে চলতে পারে না। কেন্দ্রীয় নেতারা কাল আসবেন। আমরা পলোগ্রাউন্ডে জনসভা করব।”

শনিবার সন্ধ্যার পর আওয়ামী লীগ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে রোববার সকাল থেকে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে।

বিএনপি কর্মসূচির স্থান বদলের কথা জানালেও আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে।

ঐতিহাসিক কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র এলাকায় কর্মসূচি পালনের কথা শনিবার সন্ধ্যার পর গণমাধ্যমকে জানায় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ।

বিএনপির কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানস্থল বদলের পর রাতে চট্টগ্রামের সিটি মেয়র ও নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি রোববার সকাল থেকেই পালন করা হবে।

এরআগে তিনি বলেছিলেন, “ওটা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। সেখানে মিথ্যা ঘোষকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন আমরা করতে দিতে পারি না।

রোববার একই স্থানে উভয় দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণার পর সতর্ক মহানগর পুলিশ কোনো দলকেই অনুমতি দেয়নি; বলছে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের অবস্থান থাকবে।

পুলিশ উপ কমিশনার মোখলেসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেখানে (কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র) আজ (শনিবার) সারাদিন ফোর্স মোতায়েন ছিল। আগামীকালও থাকবে।”

নিজেদের কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত বদলের আগে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান এ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। একে স্মরণীয় করে রাখতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করব। এটাই আমাদের কর্মসূচি।”

এতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত থাকবেন বলে জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান বলেন, “বিএনপি তাদের কর্মসূচির জন্য অনুমতি চেয়েছিল। তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগও একটা সমাবেশ ডেকেছে, এটা জানি।”

নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের বিপরীতে দোতলা একটি ভবনে ‘বাংলাদেশ বেতার, কালুরঘাট, চট্টগ্রাম’ অবস্থিত।

এ কেন্দ্র থেকেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতারের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি দল প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’।

বেলাল মোহাম্মদের লেখা ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ বইটি থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

এরপর ২৭ ও ২৮ মার্চ সেসময়ের মেজর জিয়াউর রহমান স্থানীয় নেতাদের অনুরোধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেছিলেন।

ঘোষণাপত্র পাঠ করায় বিএনপি জিয়াকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে দাবি করে আসছে। এ উপলক্ষেই এ কর্মসূচি নেয় দলটি।

বর্তমানে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের ওই ভবনের নিচতলায় ১১১ নম্বর কক্ষটি ‘স্বাধীনতা ঘোষণা কক্ষ (স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র), বাংলাদেশ বেতার, চট্টগ্রাম’ হিসেবে সংরক্ষিত আছে।

আরও পড়ুন: