চট্টগ্রাম ওয়াসার অধীনে 'শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার -২' এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন।
রাঙ্গুনিয়ার পোমরা এলাকায় স্থাপিত এই প্রকল্পে কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধন করে দিনে ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে নদী দূষণ ঠেকাতে কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটি বিষয়ে নজর রাখতে হবে- কর্ণফুলী, হালদা, সাঙ্গু নদীগুলোর যেন দূষণ না হয়। কর্ণফুলীর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
“এখন অনেক শিল্প কল-কারখানা হচ্ছে। প্রত্যেক শিল্প কারখানায় অবশ্যই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্ণফুলী নদী যেন কোনোভাবে দূষিত না হয়, সে ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে। সাথে অন্য নদীগুলোরও সুরক্ষা দিতে হবে।”
পানির চাহিদা পূরণে বিভিন্ন প্রকল্পের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের মানুষের পানির চাহিদা পূরণে আমরা প্রকল্প নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করেছি। শুধু চট্টগ্রামে নয় ঢাকাতেও পরিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণ করা হয়েছে।
“চট্টগ্রামে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য প্রকল্প নিয়েছি। ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন মাস্টারপ্ল্যান করেছি। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী চট্টগ্রামে পয়ঃনিষ্কাশনের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আরও পাঁচটি পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার হবে।”
প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
“একটা কথা বলতে চাই, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে। এটা একান্তভাবে দরকার। হাউজিং সোসাইটি ও শিল্প কারখানায় জলাধার যেন থাকে। বর্ষার পানি সংরক্ষণে নজর দিতে হবে।”
ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায়। তাই ভূগর্ভস্থ পানি যেন না কমে যায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
“এটা হয়তো বাইরে থেকে দেখা যায় না, কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানি আমাদের ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করতে পারে। আমরা নদীগুলোও ড্রেজিং করছি। যাতে নৌপথ সুরক্ষিত হয় এবং নদীর পানির ধারণক্ষমতা বাড়ে।”
চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘প্রাণশক্তি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সত্যিকার অর্থে আমাদের বাণিজ্য নগরী হলো চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে। তাই আমি চট্টগ্রামকে সবসময় খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
“চট্টগ্রামে অনেক অফিসের প্রধান কার্যালয় ছিল। ৭৫ এর পরের সরকারগুলো সেসব ঢাকায় নিয়ে আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম আবার প্রাণ ফিরে পায়। চট্টগ্রামে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকার করেছে।”
“শুধু মীরসরাই শিল্পনগরী নয় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের চিন্তা আছে। এতে সুরক্ষাও হবে পাশাপাশি পর্যটন হবে। এত চমৎকার একটা এলাকা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করে সার্বিক উন্নয়ন চাই।”
কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কর্ণফুলীর নিচে টানেলের কথা বললে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা মনে পড়ে। তিনি এটা সবসময় চেয়েছিলেন। ওনার একটা দাবিও ছিল।
“এখন কাজ এগিয়ে চলেছে। দুর্ভাগ্য যে তিনি আমাদের মাঝে নেই। ওনার সময়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ছিল অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী।”
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “চট্টগ্রামকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। যা কখনো মানুষ চিন্তাও করেনি তা ওনার কাছ থেকে এসেছে।
“মীরসরাই ইকোনমিক জোনে অনেক মাদার ইন্ডাস্ট্রি হবে। সেখানে কি ইউটিলিটি সেবা লাগবে তার জন্য একটা কম্প্রিহেনসিভ প্রজেক্ট হবে। সেখানে পানি লাগবে। প্রয়োজনে চাঁদপুর থেকে মেঘনা নদীর ১০০ কোটি লিটার পানি এনে তা পূরণ করা হবে।”
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, “চট্টগ্রামের নেতারা সম্মিলিত দায়িত্ব নিয়ে নেতৃত্ব দিলে জলাবদ্ধতা, মশা কিছুই থাকবে না।
“মহিউদ্দিন সাহেব দায়িত্ব নিয়ে উদাহরণ দেওয়ার মত নগরীতে পরিণত করেছিলেন। বর্তমান মেয়রও ভদ্র, সজ্জন নীতিবান মানুষ। ওনার নেতৃত্বে উন্নয়ন সম্ভব। শুধু মেয়র একা নন কাউন্সিলরদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।”
সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের ঘোষণা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “একটি পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে ওঠারা সকল সম্ভাবনা চট্টগ্রামের রয়েছে।
“পানির জন্য যে হাহাকার অতীতে ছিল তা আপনার নির্দেশনায় মিটে গেছে। তবে নগরীর খালগুলো থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং মাটি উত্তোলনের কাজে গতি না আসলে আগামী বর্ষায় আবার জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি হতে পারে।”
তবে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বাইরে থাকা অন্য খালগুলো অর্ন্তভুক্ত না হলে সংকট মিটবে না জানিয়ে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রার্থনা করেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য তুলে ধরে বলেন, “ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের চলমান কাজ শেষ হলে দক্ষিণের শিল্প কারখানাগুলোতে দিনে ছয় কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারব।
“নগরীতে কোনো স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা ছিল না। ফলে পয়ঃবর্জ্য কর্ণফুলীতে পতিত হয়। প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া জাইকা দুটি, দক্ষিণ কোরিয়া একটি এবং জাপানের মারুবেনি একটি ফেইজের কাজের সমীক্ষা শুরু করেছে।”
২০৩২ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম সম্পূর্ণ স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা সম্পন্ন একমাত্র নগরী হয়ে উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রান্তে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন-