অডিও ফাঁস: চবিতে সেই নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল, তদন্তে কমিটি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফারসি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে 'আর্থিক লেনদেন' নিয়ে ফোনালাপের অডিও সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে প্রচারের পর সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2022, 05:12 PM
Updated : 5 March 2022, 05:12 PM

শনিবার বিকালে নগরীতে চবির চারুকলা ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান জানান, ফোনালাপ সংক্রান্ত অডিও ক্লিপটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে।

“এবং সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি গ্রহণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন ও হিসাব নিয়ামক শাখার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আহমদ হোসেনের সংশ্লিষ্টতা উঠায় তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।”

মনিরুল হাসান বলেন, একই সঙ্গে ঘটনাটি তদন্ত করতে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম মাইনুল হাসান মিয়াজীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের উচ্চ ক্ষমতার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

“তিন কর্মদিবস শেষে অভিযুক্তদের লিখিত বক্তব্য পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি অডিও ক্লিপ সংক্রান্ত বিষয়ে মূল হোতাদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অঙ্গীকার করছে,” যোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক মনিরুল বলেন, “ফারসি বিভাগের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও সততার স্বার্থে শনিবারের সিন্ডিকেট সভায় বিভাগটির নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্তগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হয়েছে।”

তিনজন শিক্ষক নেওয়ার কথা থাকলেও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয় বলে জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, “আমি উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছি সততার সাথে কাজ করার জন্য।

“শুধু একজন ব্যক্তি সুকৌশলে নিয়োগপ্রার্থীদের ফোন করে তা রেকর্ড করেন, যা সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র। আমরা জড়িতদের চিহ্নিত করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চবি উপ উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে ও প্রক্টর ড. রবিউল ইসলাম ভুঁইয়া।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রত্যাশী দুই ব্যক্তির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা ও এক কর্মচারীর আর্থিক লেনদেন নিয়ে আলাপের দুটি অডিও সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন ও হিসাব নিয়ামক শাখার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আহমদ হোসেনকে কথা বলতে শোনা যাচ্ছিল অডিওতে। 

এর মধ্যে রবীনের সঙ্গে এক নিয়োগপ্রার্থীর কথিত ফোনালাপের যে রেকর্ডটি ছড়িয়েছে, তাতে টাকা ছাড়া নিয়োগ না হওয়ার কথা আলোচনা হচ্ছিল।

আর আহমদ হোসেনের ফোনালাপ বলে যেটি ছড়িয়েছে, তাতে শিক্ষক পদে চাকরির জন্য ১৬ লাখ, তৃতীয় শ্রেণির পদে ১০-১২ লাখ ও চতুর্থ শ্রেণির পদে ৮ লাখ টাকা দিতে হবে- এমন আলোচনা হয় এক নিয়োগপ্রার্থীর সঙ্গে।

দুই মাস আগে অডিও ক্লিপটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে হাটহাজারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয় বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দুই মাস পর বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তদন্ত কমিটি ও নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল করল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।