বাংলার সমৃদ্ধিকে ফেরাতে সব চেষ্টা চলছে: বিএসসি

ইউক্রেইনে যুদ্ধের মধ্যে রকেট হামলায় বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধির এক প্রকৌশলীর মৃত্যুর পর বাকি ২৮ জনকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন-বিএসসি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2022, 11:52 AM
Updated : 3 March 2022, 11:55 AM

বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) ড. পীযূষ দত্ত বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। ২৮ নাবিক ও জাহাজ সেখানে আছে। নাবিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।”

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ডিজি শিপিং এবং রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে সুস্থভাবে যাতে নিয়ে আসতে পারি।”

জাহাজে থাকা ২৮ জনের সবাই এখন পর্যন্ত সুস্থ আছেন বলে জানান পীযূষ দত্ত।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএসসি কর্মকর্তা পীযূষ বলেন, জাহাজে যারা আছেন, যুদ্ধের মধ্যে তাদের তীরে সরিয়ে নিতে হলেও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রয়োজন। 

“তীর থেকে যদি নিশ্চয়তা না পাই, তাহলে চট করে তাদের জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতে পারি না। আমাদের যারা চেষ্টা করছেন শোরে (তীরে), তাদের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেলে আমরা এ ব্যবস্থাটা নেব। এখন তারা জাহাজেই আছে।

“আমরা মনে করছি- যতক্ষণ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা না পাই, ততক্ষণ এখানেই তুলনামূলকভাবে ভালো।”

জাহাজে খাবার, পানিসহ অন্যান্য যে সুযোগ সুবিধা তারা পাচ্ছেন, বাইরে সরিয়ে নিলে সেসব সুবিধাও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে।

“আমাদের চেষ্টা থাকবে আমাদের এই সহকর্মীদের নিরাপদ পজিশনে নিয়ে আসতে। সিকিউরিটি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমরা তাদের নামিয়ে দিতে পারি না।”

বাংলার সমৃদ্ধি’র মালিকানা বিএসসির হলেও ডেনিশ কোম্পানি ডেলটা করপোরেশনের অধীনে সেটি ভাড়ায় চলছিল। গত ২৬ জানুয়ারি মুম্বাই বন্দর থেকে রওনা হয়ে তুরস্কের ইরেগলি হয়ে ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে পৌঁছায় জাহাজটি।

২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি বন্দরের আউটার অ্যাংকরেজে ছিল, পরদিন ইনার অ্যাংকরেজে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই বন্দর থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল বাংলার সমৃদ্ধির। কিন্তু সেদিন ভোরে রাশিয়া ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করলে পরিস্থিতি রাতারাতি বদলে যায়।

জাহাজটি যেখানে নোঙ্গর করে আছে সেখান থেকে মূল সাগরে যেতে ৬০ নটিক্যাল মাইল পথ পার হতে হবে এবং সেজন্য স্থানীয় ‘পাইলট’ দরকার, যে পথ দেখিয়ে জাহাজটিকে বের করে নেবে। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে তা পাওয়া যাচ্ছে না।

তাছাড়া সাগরে মাইন পাতা রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে যুদ্ধের মধ্যে সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় নেই জাহাজটির।

এ পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত প্রায় সোয়া ৯টা) ওই জাহাজে রকেট হামলা হয়। নিহত হন জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পীযূষ দত্ত বলেন, “মিসাইল বা রকেট যাই বলেন, হঠাৎ গতকাল আমাদের জাহাজকে অ্যাটাক করেছে। তাতে করে আমাদের ব্রিজ রুমে আগুন ধরে যায় এবং আমাদের একজন সহকর্মী মারা যান। এটা অত্যন্ত কষ্টের।

“বাকি ২৮ জন এখন জাহাজেই আছেন। সেখানে খাওয়া, পানি বা তেল যতটুকু আছে, তাতে এক মাস বা আরও একটু বেশি সময় থাকতে কোনো অসুবিধা নাই। আশা করছিলাম, এটা নিরাপদ জোনে আছে। কিন্তু যেখানে চারদিকে যুদ্ধ হচ্ছে, সেখানে আতঙ্ক তো থাকেই।”

ওয়ার জোন ঘোষণার পরও জাহাজটি কেন সেখানে গেল জানতে চাইলে পীযূষ দত্ত বলেন, “আমাদের যে চার্টার পার্টি আছে, সে অনুযায়ী ইন্স্যুরাররা যদি ওয়ার রিস্ক প্রিমিয়াম নিয়ে কোথাও যাওয়ার পারমিশন দেয়, সেক্ষেত্রে আমাদের চার্টার পার্টি অনুযায়ী সেটা অ্যালাউ করতে হয়। আমাদের যেমন লিবিয়াতে বা পারস্য উপসাগরে বিভিন্ন সময় এরকম পরিস্থিতি হয়। সেসব ক্ষেত্রেও ওয়ার রিস্ক প্রিমিয়াম নিয়ে চার্টার পার্টি অনুসারে সেগুলো অ্যালাউ করতে হয়।”

বাংলার সমৃদ্ধির আশেপাশে আরও গোটা বিশেক জাহাজ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কনডিশন ফুলফিল করেই সেখানে যাওয়া হয়েছে। কোনো ব্যত্যয় হয়নি।”

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পীযূষ দত্ত বলেন, “যদি জাহাজ সেখানে যাওয়ার আগেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত, তাহলে ক্যাপ্টেন চাইলে ফিরে আসতে পারতেন। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয় তারা সেখানে পৌঁছানোর পরে।”