চাকরি ফেরত চেয়ে দুদকে শরীফের আবেদন

দুর্নীতি দমন কমিশনের চাকরিচ্যুত উপ সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন তার চাকরি ফিরে পাওয়ার আবেদন করেছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2022, 06:56 AM
Updated : 27 Feb 2022, 06:56 AM

রোববার সকালে ‘বাহকের মাধ্যমে’ আবেদনটি ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন বলে শরীফ উদ্দিন নিজেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন চাকুরি বিধিমালা-২০০৮ এর ৪৮ বিধি মোতাবেক অপসারণ আদেশ পুননিরীক্ষণ করে অপসারণ আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য এ আবেদন করেছি।”

আবেদন পত্রে শরীফ লিখেছেন, দুদক চট্টগ্রাম-২ কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে তার কাছে ৭০টি অভিযোগের অনুসন্ধান ও ৪২টি মামলার তদন্তভার ছিল। রোহিঙ্গাদের এনঅঅইডি বিষয়ক ৬টি অভিযোগপত্রের বিষয়ে প্রধান কার্যালয়ের অনুসন্ধান দলের সদস্য ছিলেন তিনি। বাঁকখালী নদী দখলে ১৫৭ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার দুর্নীতির বিষয়ে মামলা করার সুপারিশ করেছিলেন।

২০১৪ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে অপসারণের আগে পর্যন্ত কী কী করেছেন, তার বিস্তারিত ওই আবেদনে তুলে ধরেছেন শরীফ।

চাকরিতে থাকাকালে ‘পেশাদারিত্বের জন্য প্রশংসিত’ হয়েছিলেন দাবি করে তিনি লিখেছেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে ‘প্রাণনাশের হুমকিও’ পেয়েছেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক, সামাজিক ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিয়ে এবং কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

চাকরি থেকে অপসারণের ওই আদেশ ‘অযৌক্তিক ও অমানবিক ও সংবিধানের ১৩৫(২) অনুচ্ছেদ এবং মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন’ বলে দরখাস্তে দাবি করেছেন শরীফ।

২০০৮ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি অনুযায়ী গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করে দুদক। ওই আদেশের পর থেকে নানা আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে।

শরীফকে অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার ও ৫৪(২) বিধি বাতিলের দাবিতে তার সহকর্মীরাও দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ সংস্থার অন্যান্য দপ্তরে মানববন্ধন করেছেন, যা নজিরবিহীন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে শরীফকে চাকরি থেকে অপসারণের বিষয়ে কমিশনের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন দুদক সচিব। সেখানে বলা হয়, শরীফের বিরুদ্ধে ‘শৃঙ্খলা বহির্ভূত’ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও দপ্তর থেকে নানা অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তিনি দুদকের নির্দেশিকা অনুসরণ না করে ‘নিজের খেয়ালখুশি মত’ কাজ করতেন। মানুষকে নোটিস বা টেলিফোনের মাধ্যমে ডেকে এনে তিনি ‘হয়রানি’ করতেন।

দুদক বলছে, অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে কোনো ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ বা নো ডেবিট’ করার প্রয়োজন হলে শরীফ ‘আইন মানতেন না এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতেন না’। কক্সবাজারে একজন সার্ভেয়ারের কাছ থেকে ৯৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা জব্দ করে তা কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে এক বছর ৪ মাস তিনি নিজের হেফাজতে রাখেন।

‘প্রভাব খাটিয়ে’ ভাই ও আত্মীয়কে চাকরি দেওয়া এবং চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে পটুয়াখালীতে যাওয়ার পর ‘চাঁদাবাজি’ করার অভিযোগের কথাও বলেছে দুদক।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গত ২১ ফেব্রুয়ারি শরীফ সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক লিখিত বিবৃতিতে দাবি করেন, যাদের বিরুদ্ধে তিনি মামলার সুপারিশ করেছেন, তাদের অভিযোগেই তাকে কমিশন থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে যাচাই-বাছাই না করে; অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ‘আপস’ করলে এতকিছু ‘হত না’।

চাকরি হারানোর আগে গত ৩১ জানুয়ারি ‘হত্যা ও চাকরি খাওয়ার হুমকি’ পেয়ে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন শরীফ উদ্দিন।

রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “চাকরি থেকে অপসারিত হওয়ার পর থেকে আরও ‘উদ্বিগ্ন’ অবস্থায় আছি। আগে নিজে ‘ইনসিকিউরিটি ফিল’ করলেও এখন পরিবারসহ করছি।