‘জেলা প্রশাসক প্রত্যাহার জরুরি’: চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি

আইনজীবী, বিচার প্রার্থী ও জনগণের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের ‘সুসম্পর্ক বজায় রাখতে’ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহার ‘খুব জরুরি’ বলে মনে করে জেলা আইনজীবী সমিতি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2022, 05:32 PM
Updated : 23 Feb 2022, 05:32 PM

পাশাপাশি আদালত পাড়া হিসেবে পরিচিত পরীর পাহাড় বা কোর্ট হিলের জটিলতার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি তুলে ধরতে চান সমিতির নেতারা।

বুধবার কোর্ট হিল নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের বিষয় নিয়ে কথা বলতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতির নেতারা এসব কথা বলেন।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচ এম জিয়া উদ্দিন এক প্রশ্নের জবাবে অভিযোগ করে বলেন, “গত চার-মাস ধরে এটা চলছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। সেকারণে আমরা আইনী পথে হেঁটেছি। কিন্তু জেলা প্রশাসক এই আইনী মোকাবেলাকে দুর্বলতা মনে করছেন।

“বর্তমানে তার (জেলা প্রশাসক) কর্মকাণ্ড যেভাবে প্রসারিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, আইনজীবী সমিতি, বিচার প্রার্থী এবং চট্টগ্রামের জনগণের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহার খুব জরুরি।”

‘কোর্ট হিল’ বা ‘পরীর পাহাড়ে’ নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে আইনজীবী সমিতি ও জেলা প্রশাসনের বিরোধ চলছে গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে।

বর্তমানে এ পাহাড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন এবং আইনজীবীদের পাঁচটি ভবনসহ বেশ কিছু সরকারি কার্যালয় রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচ এম জিয়া উদ্দিন বলেন, “উনারা (জেলা প্রশাসন) নিজেদের চট্টগ্রামের প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন। আমরা সার্বিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসে সব জানাতে চাই।”

সমিতির জমি ও স্থাপনা বিষয়ে জেলা প্রশাসন থেকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ‘সত্য গোপন করে’ প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয় ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে গোপন প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের।

তিনি বলেন, “আদালত ভবন বিচারক, আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের। পুরাতন আদালত ভবনের সামনে সৌন্দর্য্যবর্ধনের নামে চলাচলের একমুখী রাস্তা, পূর্বপাশের খোলা স্থানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, রাতের অন্ধকারে বাগান নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা নোটিশ দিয়েছি। আইনগত ব্যবস্থা নেব।”

সমিতির সভাপতি আবু মোহাম্মদ হাশেম বলেন, “এখানে হাজার হাজার বিচার প্রার্থী মানুষ আসেন, কাজ শেষ করে চলে যান। কিন্তু বর্তমান জেলা প্রশাসক আসার পর থেকে অব্যাহত চক্রান্ত করছেন। ১৯৭৪ সাল থেকে ২০-২৫ জন জেলা প্রশাসক দেখেছি। কেউ এরকম করেননি।”

সাবেক সভাপতি রতন কুমার রায় বলেন, “১৯৭৭ সালের রাষ্ট্রপতি আমাদের এ জমি বরাদ্দ দেন। পরে ভেন্ডার সমিতিকে কিছু অংশ বরাদ্দ দিলে আমরা মামলা করে চৌহদ্দি বিষয়ে ডিগ্রি পেয়েছি। সিভিল কোর্টের ডিগ্রিকে জেলা প্রশাসক নন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী হলেও মানতে হবে।

বার কাউন্সিলের সদস্য মুজিবুল হক বলেন, “শুরুতে জেলা প্রশাসক বলেছেন, সিডিএ আমাদের ভবন নির্মাণে অনুমোদন দেয়নি। এখন বলছে যথাযথ যাচাই করে অনুমোদন দেয়নি। আগের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে নতুন মিথ্যাচার করছে।”

লিখিত বক্তব্যে সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়া বলেন, “গৃহায়ন ‍ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি সমিতির কোনো বক্তব্য শোনেনি। জমির দলিল ও ভবনের অনুমোদনপত্র যাচাই না করে মিথ্যা পরিদর্শনের নাটক সাজিয়ে মনগড়া প্রতিবেদন হাসিল করতে জেলা প্রশাসক অপতৎপরতা চালাচ্ছেন।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় দুর্নীতি, ২০ শতাংশ হারে কমিশন আদায়, সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচের উৎস ও আদায় প্রক্রিয়া এবং মিউটেশন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তা তদন্তের আহ্বান জানান।

আইনজীবী সমিতির ৫টি ভবনেরই অনুমোদন আছে জানিয়ে জিয়া উদ্দিন বলেন, “একুশে ভবনের এক্সটেনশনেরও অনুমতি আছে। নতুন দুই ভবনের কাজ যথাযথ অনুমোদন নিয়েই শুরু করা হবে।”

আরও পড়ুন