শনিবার পরীর পাহাড় বা ‘কোর্ট হিল’ নামে পরিচিত এ আদালত পাড়ায় জেলা আইনজীবী সমিতির মিলনায়তন ভবনের সামনে গাছ কাটছিলেন শ্রমিকরা।
সকালে জেলা প্রশাসন থেকে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে চার শ্রমিককে আটক করে পুলিশ। এরপর সেখানে গাছ কাটার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
জেলা প্রশাসনের দাবি, ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি জমির গাছ কাটা ও নির্মাণ কাজের প্রস্তুতি নেওয়ায় তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
আর জেলা আইনজীবী সমিতির দাবি, নিজেদের মালিকানাধীন জমিতে বিদ্যমান ভবনের বর্ধিত অংশের কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে কেউ বাধা দিতে পারে না।
ওই পাহাড়ে আইনজীবীদের পাঁচটি ভবন রয়েছে। আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য আরও দুটি নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগকে ঘিরে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির বিরোধ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সামনে আসে।
এরমধ্যেই গাছ কাটা এবং কাজ বন্ধ রাখার বিষয়টিকে ঘিরে আবার প্রকাশ্যে এলো প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির বিপরীতমুখী অবস্থান।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (স্টাফ অফিসার টু ডিসি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গভীর রাত থেকে গাছ কাটা ও মাটি খোড়ার কাজ করছিলেন ১০-১৫ জন শ্রমিক। সরকারি জমিতে থাকা একটি গাছ তারা কেটে ফেলেছেন।
“অন্য গাছটি কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পুলিশকে জানালে তারা এসে চার শ্রমিককে আটক করে নিয়ে গেছেন। কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।”
এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসনের অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারি জমিতে তারা (আইনজীবী সমিতি) টিন দিয়ে বেড়া দেওয়ার কাজও শুরু করেছিল। পুলিশ আসার পর তা থামে। মূলত নতুন একটি চেম্বার ভবন নির্মাণের জন্য তারা কাজ শুরু করেছে। কয়েকদিন আগে সেটির ভিত্তি প্রস্তরও স্থাপন করেছে।
জানতে চাইলে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের জায়গায় আমরা কাজ করছি। সেখানে সমস্যার কী আছে। নতুন কিছু নয়, আইনজীবী মিলনায়তন ভবনের সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
“শ্রমিক আটকের বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে। আশা করি, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। সে প্রক্রিয়া চলমান। আর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়নি। বিকেল হয়ে যাওয়ায় আজ আর কাজ হয়নি। আবার হবে।”
বর্তমানে পরীর পাহাড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন এবং আইনজীবীদের পাঁচটি ভবনসহ বেশ কিছু সরকারি কার্যালয় রয়েছে।
এরপর পরীর পাহাড়কে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের প্রস্তাব বিবেচনা করার কথাও জানিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
ওই পাহাড়ের চূড়ায় পুরাতন আদালত ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৮৯৩-৯৪ সালে। পুরনো ভবনটি ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হলে ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবিতে চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ আন্দোলন গড়ে তোলে।
পরে ২০১০ সালে পুরাতন ভবনের পেছনে চারতলা নতুন আদালত ভবন নির্মাণ করা হয়। সংস্কারের পর শতবর্ষী পুরাতন আদালত ভবনটি তখন থেকে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যেই ‘পরীর পাহাড়কে’ হেরিটেজ ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
পাশাপাশি এ পাহাড়ে থাকা চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিস এবং নগরীর অন্যত্র থাকা সরকারি দপ্তর মিলিয়ে মোট ৪৪টি সরকারি অফিস কালুরঘাটে সমন্বিত অফিস কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার একটি প্রকল্প নিয়েও কাজ এগোচ্ছে।
আরও পড়ুন: