রেলে ‘রানিং ভাতা’ না থাকলে রোববার থেকে কর্মবিরতি

রেলওয়েতে দেড়শ বছরের বেশি সময় ধরে প্রচলিত ‘রানিং ভাতা’ বা ‘মাইলেজ সুবিধা’ বহাল রাখার দাবিতে আগামী রোববার মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন ট্রেন চালক, সহকারী এবং টিকেট পরিদর্শকরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2022, 04:54 PM
Updated : 27 Jan 2022, 04:54 PM

দাবি আদায়ে মঙ্গলবার থেকে তারা আট  ঘণ্টার বেশি কাজ না করায় চট্টগ্রামে কয়েকটি ট্রেনের চলাচল বাতিল করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু ট্রেনের যাত্রা বিলম্বিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ট্রেন চালক  (লোকো মাস্টার), সহকারী চালক, গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকরা (টিটি) রানিং স্টাফ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১,৭৪২টি রানিং স্টাফের পদ থাকলেও বর্তমানে ১,০১৩ জন কর্মরত আছেন।

রেলের সংস্থাপন কোড অনুসারে, রানিং স্টাফরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করলে অথবা ১০০ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে একদিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা রানিং ভাতা (মাইলেজ) হিসেবে পাবেন।

জনবল সংকট থাকায় এই কর্মীরা সচরাচর ১৫-১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত টানা কাজ করেন বলে  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমকে জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান।    

এতে মাস শেষে তারা নির্ধারিত বেতনের দ্বিগুণ বা তিনগুণ টাকাও পেতেন। পাশাপাশি এই সুবিধার আওতায় মূল বেতন হিসেব করে যে অবসরকালীন ভাতা পেতেন তার সঙ্গে আরও ৭৫ শতাংশ যোগ করে পেনশন নির্ধারণ হত।

তবে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রানিং ভাতা (মাইলেজ) মূল বেতনের অংশ হিসেবে গণ্য হবে না এবং তা পেনশনেও যোগ হবে না। এছাড়া ভাতার পরিমাণ মাসিক মূল বেতনের বেশি হতে পারবে না।

সম্প্রতি এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে জানিয়ে মজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৬০ বছর ধরে যে নিয়মে আমরা বেতন-ভাতা ও পেনশন পাই তা চালু করাই আমাদের দাবি।

“হঠাৎ কী কারণে তা বাতিল করা হলো সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। এই দাবিতে রানিং স্টাফরা ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করবেন।”

এ বিষয়ে আলোচনার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের নেতাদের আহ্বান জানালেও কর্মচারীরা ‘অনাগ্রহী’ হওয়ায় নেতারা তাতে অংশ নেননি।

মজিবুর রহমান বলেন, “আজ আমাকে আলোচনার জন্য চিঠি দেওয়া হয় গতকাল বিকেলে। কিন্তু কর্মচারীরা রাজি না হওয়ায় সে আলোচনায় যেতে পারিনি। আমাদের দাবি পুরোপুরি আগের ব্যবস্থা চালু করা।”

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের কর্মচারীদের নয়টি ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে আটটি এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বলেও জানান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলন, “গত ১৪ মাসে রেলমন্ত্রী, ডিজি, সচিব সবাই আশ্বস্ত করেছেন আগের ব্যবস্থা চালু হবে। কিন্তু উল্টো মাঠ পর্যায়ে নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। একারণে অনেকের পেনশন কার্যক্রম আটকে রেখেছে।

“আন্দোলন করে গতমাসের বেতন পেয়েছি। সেটাও ২৩ জানুয়ারি। অথচ ১-৫ তারিখের মধ্যে বেতন হয় অন্য সময়।”

আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার থেকে রানিং স্টাফরা ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করছেন না বলে জানান তিনি।

এর ফলে বুধবার বন্দর নগরী থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে চলাচলকারী সাতটি শাটল ট্রেনের মধ্যে তিনটির যাত্রা বাতিল করা হয়। বৃহস্পতিবার বাতিল হয় নগরী থেকে নাজিরহাটে চলাচলকারী ডেমু ট্রেনের যাত্রা।

এর আগে মঙ্গলবার রাত ২টায় বগুড়ার সান্তাহার স্টেশনে জ্বালানি তেলবাহী একটি ট্রেন পৌঁছার পর রানিং স্টাফরা নেমে যান। এতে তেলভর্তি ৩০টি ওয়াগন নিয়ে খুলনা থেকে পার্বতীপুরগামী ট্রেনটি সান্তাহারে প্রায় ১৮ ঘণ্টা আটকে ছিল।

একই কারণে বুধবার লালমনিরহাট থেকে বগুড়াগামী কমিউটার ট্রেন ছাড়তে তিন ঘণ্টা দেরি হলে পরে যাত্রা বাতিল করা হয়। এছাড়া যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী কয়েকটি ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্ব রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনছার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রানিং স্টাফরা ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ না করায় নাজিরহাট রুটের ডেমু এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি শাটলের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। তবে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়নি।”

সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতনরা বলতে পারবেন।”

পরবর্তীতে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলীর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়নি।”

এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর ও পূর্ব রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তারা ফোন ধরেননি।