এর আগে প্রায় ১৮ বছর দুবাইয়েই পালিয়ে ছিলেন সেই সময়ে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মহিউদ্দিন, যে চট্টগ্রামের একসময়ের ত্রাস শিবির নাছিরের ভাই।
র্যাব ৭ এর হাটহাজারী ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০৩ সালে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর পালিয়ে দুবাই যাওয়া মহিউদ্দিন ২৯ অক্টোবর দেশে ফেরে। আবার আজই (রোববার) তার দুবাই চলে যাওয়ার কথা ছিল।
“আজ রাত আটটায় তার ফ্লাইট ছিল। টিকেটও কেটেছিল।”
নজরদারির মাধ্যমে তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে র্যাব ৭ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তিন মাস আগে দেশে ফিরে মহিউদ্দিন বিভিন্ন কৌশলে আত্মগোপনে ছিল। দণ্ডিত এ আসামির বাংলাদেশে আসার সংবাদ পেয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার ও নজরদারি অব্যাহত রাখে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর বলেন, “আমরা তার গতিবিধি অনুসরণ করছিলাম। পরে শনিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করি।”
রোববার বিকালে মহিউদ্দিনকে আদালতে উপস্থিত করা হলে তাকে কারগারে পাঠানো হয় বলে জানান তিনি।
অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর ছেলে সৈকত মুহুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শত শত নতুন ঘটনা আর পলাতক আসামির মাঝে ২১ বছরের পুরনো মামলার আসামিকে ধরার জন্য র্যাবকে ধন্যবাদ।”
২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান রোডে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর (৬০) বাসায় ঢুকে তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের স্ত্রী উমা মুহুরী সেদিনই নগরীর কোতোয়ালী থানায় ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে হত্যা মামলা করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলায় ২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নাছির ওরফে গিট্টু নাছির, আজম, আলমগীর কবির ওরফে বাইট্টা আলমগীর এবং তছলিম উদ্দিন মন্টুকে মৃত্যূদণ্ডাদেশ প্রদান করেন।
এছাড়া মহিউদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন, হাবিব খান, সাইফুল ইসলাম ওরফে ছোট সাইফুল ও শাজাহানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের ওই রায়ের পর মামলার ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে আসে, পাশাপাশি কারাগারে থাকা আসামিরাও আপিল করেন।
এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া গিট্টু নাসির ২০০৫ সালের ২ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী সাইফুল ইসলাম ওরফে ছোট সাইফুল ২০০৪ সালের ২৯ জুন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিজ বাসায় খুন হয়।
হাই কোর্ট শুনানি শেষে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০০৬ সালের ১৯ জুলাই রায় দেয়। সেই রায়ে যাবজ্জীবন সাজার আসামি শাহাজাহান ও সাইফুল ওরফে ছোটো সাইফুল খালাস পান, অন্যদের সাজা বহাল থাকে।
এরপর মৃত্যদণ্ডের তিন আসামির মধ্যে আলমগীর কবির খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করেন। আর তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু, মোহাম্মদ আজম করেন জেল আপিল।
২০২০ সালে আপিল বিভাগ তিন আসামির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দেন।
মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক আসামি হাবিব খান এখনও পলাতক।
আরও পড়ুন: