কর্ণফুলী-হালদায় পয়ঃবর্জ্য দূষণ কমাতে আরও অপেক্ষা
মিঠুন চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরো, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 22 Jan 2022 08:37 PM BdST Updated: 22 Jan 2022 08:37 PM BdST
-
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে চাক্তাই খালের সংযোগ অংশে নদীর পানিতে ভাসছে বিভিন্ন বর্জ্য। সম্প্রতি নদীর চাক্তাই খালের অংশ থেকে তোলা ছবি।
-
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে চাক্তাই খালের সংযোগ অংশে নদীর পানিতে ভাসছে বিভিন্ন বর্জ্য। সম্প্রতি নদীর চাক্তাই খালের অংশ থেকে তোলা ছবি।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে পয়ঃবর্জ্যের দূষণ কমিয়ে আনতে আরও অন্তত চার বছর অপেক্ষা করতে হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর এক-চতুর্থাংশ এলাকার পয়ঃবর্জ্য শোধন সম্ভব হবে।
ওই প্রকল্পের ঠিকাদার আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে মাঠের কাজ শুরু করবে; যা শেষ করতে চার বছর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
এখন প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার টন তরল বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে কর্ণফুলী; যা কর্ণফুলীর সঙ্গে যুক্ত হালদা নদীতেও ছড়িয়ে পড়ে।
আরও চার বছর এই হারে চলতে থাকলে দুই নদীর দূষণ চরম আকার ধারণ করবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
২০১৩ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম নগরীর ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। মহাপরিকল্পনায় পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ছয়টি পয়ঃশোধনাগার এবং দুটি ফিকাল স্লাজ শোধনাগার স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
এর ৬ বছর পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়)’র পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
নানা ধাপ পেরিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পায়। চলতি মাসে তাদের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে।
ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার পরই তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড সফট ড্রইংসহ আনুষাঙ্গিক কাজ শুরু করেছে।
“এ কাজে বিদেশ থেকে মালামাল আনতে হবে। সেগুলো এলে পাইপ লাইনের কাজ শুরু হবে। মাঠে ফিজিক্যাল ওয়ার্কের আগে অনেক কাজ আছে সেগুলো শুরু হয়েছে।”

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে চাক্তাই খালের সংযোগ অংশে নদীর পানিতে ভাসছে বিভিন্ন বর্জ্য। সম্প্রতি নদীর চাক্তাই খালের অংশ থেকে তোলা ছবি।
পরিবেশবিদ ও কর্ণফুলী গবেষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৯ সালের তুলনায় এখন দৈনিক পয়ঃবর্জ্যের পরিমাণ আরও বেশি। সময়ের সাথে সাথে পরিমাণ বাড়তে থাকবে। স্যুয়ারেজ প্রকল্প গ্রহণের কথা গত ১০ বছর ধরেই শুনছি। কর্ণফুলী ও হালদার পানিই কিন্তু পরিশোধনের পর আবার নগরীর বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা হয়।”
কর্ণফুলী গিলে খাচ্ছে আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা
কর্ণফুলী নদীর অবস্থা ভয়াবহ: ভূমিমন্ত্রী
চার বছরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রকৌশলী আরিফুল বলেন, “পুরো নগরীকে স্যুয়ারেজ সেবার আওতায় আনতে আরও পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।”
‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়)’ এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকার দিচ্ছে ৩৭৫৮ কোটি টাকা এবং ওয়াসা ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে।”
প্রকল্পের আওতায় একটি পয়োশোধনাগার, একটি ফিকাল স্লাজ শোধনাগার, ২০০ কিলোমিটার পয়ো পাইপলাইন, ১৫টি পাম্প স্টেশন, ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন এবং ৭২ হাজার ৫০২টি বাড়ির সংযোগ নির্মাণ করা হবে।
ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, এটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিদিন ১০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য
এবং ৩০০ ঘনমিটার ফিকাল স্লাজ পরিশোধন সম্ভব হবে; যা নগরীর মোট পয়ঃবর্জ্যের ২০ শতাংশ এবং ফিকাল স্লাজের ৪১ শতাংশ।
এতে নগরীর প্রায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ১১টি ওয়ার্ডের উত্তর হালিশহর, নয়াবাজার, রামপুর, পাহাড়তলি, আমবাগান, লালখান বাজার, আসকার দিঘীর পাড়, কোতোয়ালী, ফিরিঙ্গিবাজার, সদরঘাট, দক্ষিণ আগ্রাবাদ ও সল্টগোলা ক্রসিং এবং সংলগ্ন এলাকা পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আসবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, “এত দেরিতে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও তা যেন নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চসিক-ওয়াসা চুক্তি
অধিগ্রহণের জমিতে প্রাচীর দিতে গিয়ে বাধায় চট্টগ্রাম ওয়াসা
বন্দরনগরীর ‘স্যানিটেশন মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়নের তাগিদ
“পাশাপাশি এ প্রকল্পে কাজের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন অবশ্যই ভালো হতে হবে। কারণ পরবর্তী ৫ ধাপের কাজ এটার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এটা একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। তাছাড়া পরিশোধন সঠিক না হলে তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।”
গবেষক ইদ্রিস আলী বলেন, কর্ণফুলী নদীর পানির মান এমনিতেই ভালো নয়। জোয়ার-ভাটার নদী হওয়ায় দূষণের প্রভাব প্রাকৃতিক নিয়মে কিছুটা কমে। তবে দূষণের কারণে মাছের বেশকিছু প্রজাতি হারিয়ে গেছে।
“আরও চার বছর পয়োবর্জ্য দূষণ চলতে থাকলে বাকি প্রজাতিগুলোও বিপন্ন হবে। কর্ণফুলীর সাথে হালদার সংযোগ থাকায় সেটিও দূষিত হচ্ছে।”
ক্ষতিপূরণের দাবি ছাড়েনি চৌচালাবাসী
৫৬ বছর আগে নগরীর হালিশহরের চৌচালা এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ১৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল ওয়াসা।
প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় অধিগ্রহণ করা জমি ফেরত চেয়ে ২০০১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করে স্থানীয়রা। ২০১৪ সালে হাই কোর্ট চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে নির্দেশ দেয়।
‘অধিগ্রহণ না হওয়া হালিশহরের কৃষি জমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির’ সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক মুনিরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই আদেশের বিরুদ্ধে ওয়াসা লিভ টু আপিল করেছিল। তাতেও হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখা হয়।
“এরপর প্রধানমন্ত্রী বরাবরে চিঠি দিয়েছি। জেলা প্রশাসকের কাছে ১২-১৪ বার চিঠি দিয়েছি। আমরা ১০ হাজার ভুক্তভোগী। গত দুদিন ধরে ওয়াসা মাইকিং করছে সরে যেতে। ৬০ বছর আগে মৌজা দর ছিল ১৮২ টাকা। এখন প্রতি গণ্ডার মৌজা দর ১০ লাখ টাকার উপরে। আমরা চাই যথাযথ ক্ষতিপূরণ।”
ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, “১৯৬৩ সালের এলএ মামলার আওতায় এ জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। উচ্চ আদালত জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা দেন। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়নে জমিটি প্রয়োজন বলে জেলা প্রশাসন মত দিয়েছে।
“এ জমি না হলে স্যুয়ারেজ প্রকল্প আর হবেই না। কেউ যদি ক্ষতিপূরণ না পেয়ে থাকেন ডিসি অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।”
-
চট্টগ্রাম নগরসংস্থার কর্মকর্তার মৃত্যু
-
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলাকে ‘নৌকার ঘাঁটি’ দেখতে চান পরশ
-
চট্টগ্রামে চার স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ
-
জলাবদ্ধতা: সিসিসি ‘বিপদ’ দেখছে, সিডিএ দিচ্ছে আশা
-
ডগ স্কোয়াড: বিদেশে প্রশিক্ষণে গিয়ে ‘নিখোঁজ’ দুই পুলিশ
-
পদ্মা সেতুতে ‘বাড়তি ব্যয়’ দেখানোর দাবি আমীর খসরুর
-
‘ডাকাত আখ্যা দিয়ে’ র্যাব পেটানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৩
-
‘স্বর্গ পেতে’ বন্ধুকে হত্যা, চট্টগ্রামে একজনের মৃত্যুদণ্ড
-
চট্টগ্রাম নগরসংস্থার কর্মকর্তার মৃত্যু
-
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলাকে ‘নৌকার ঘাঁটি’ দেখতে চান পরশ
-
চট্টগ্রামে চার স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ
-
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা: খালের বাঁধে বিপদ দেখছে সিসিসি, সিডিএ দিচ্ছে আশা
-
পদ্মা সেতুতে ‘বাড়তি ব্যয়’ দেখানোর দাবি আমীর খসরুর
-
ডগ স্কোয়াড: বিদেশে প্রশিক্ষণে গিয়ে ‘নিখোঁজ’ দুই পুলিশ
সর্বাধিক পঠিত
- অবিশ্বাস্য পথচলা শেষে শিরোপা হাসি রিয়ালেরই
- দুর্দান্ত কোর্তোয়া, অবিশ্বাস্য কোর্তোয়া
- ২৫ বছরের চেষ্টা বিফল, বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে কানাডা
- ইতিহাস গড়লেন আনচেলত্তি
- হেরাথের ক্যাম্পে ৩২ স্পিনার, নির্বাচকরা খুঁজবেন নতুন প্রতিভা
- বরিশালে নিয়ন্ত্রণহারা বাস গাছে লেগে চুরমার, নিহত ১০
- চাপ ছিল, প্রলোভনও ছিল: মসিউর
- ডলার সংকট: রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন যথেষ্ট?
- ‘আর্জেন্টিনার জন্য প্রতিটি মিনিট, ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ’
- মার্সেলোর ক্যারিয়ার আমার চেয়েও ভালো: কার্লোস