চট্টগ্রাম নগর আ. লীগের সমস্যা মেটাতে ৬ জনের দল

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ইউনিট সম্মেলনে ‘ত্রুটি শনাক্তে’ ১৪টি থানা সাংগঠনিক টিম গঠন করা হবে, যার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নগরের ছয় নেতাকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2022, 03:12 PM
Updated : 16 Jan 2022, 03:12 PM

এসব টিম ‍তৃণমূলের সাথে আলোচনা করে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান, সদস্য নবায়ণ ও সদস্য সংগ্রহের কাজ পর্যবেক্ষণ করবে। পাশাপাশি ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন আয়োজনের ‘পরিবেশ’ তৈরি করবে।

এসব সাংগঠনিক টিমের সুপারিশের ভিত্তিতে ‘ত্রুটি’ সংশোধনে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র। ফলে এসব কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগে নগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শুরু হচ্ছে না।

রোববার সকালে ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে চট্টগ্রামের নেতাদের আলোচনায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন আয়োজন প্রক্রিয়া ও সদস্য সংগ্রহ নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের আপত্তির মুখে ঢাকায় এই সভা হল।

এর আগে নগর কমিটির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ঢাকায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সাথে দেখা করে তাদের আপত্তির কথা জানান।

চট্টগ্রামের নেতাদের কাছ থেকে মৌখিক ও লিখিত আপত্তি পেয়ে ২২ ডিসেম্বর নগরের ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা শুরুতে ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামে সভার আয়োজন করেন। পরে তারিখ ও স্থান পরিবর্তন করে রোববার তা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।

রোববারের সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সাংসদ এম এ লতিফ।

নগরের নেতাদের মধ্যে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি সুনীল সরকার, নঈম উদ্দিন চৌধুরী, জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন, খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফা হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, যুগ্ম সম্পাদক ও সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম।

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা খোলামেলা আলোচনা করে ঐক্যের পথ খুঁজেছি এবং সবাই আন্তরিকভাবে কথা বলে সমস্যা সমাধানের পথ রচনা করেছেন।

“মহানগর নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ১৪টি থানার জন্য ১৪টি সাংগঠনিক টিম গঠিত হবে। সেই সব টিম ইতোমধ্যে সমাপ্ত ইউনিট সম্মেলন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে কোনো ত্রুটি থাকলে তা সনাক্ত করবে এবং তৃণমূলের সর্বস্তরে আলোচনা করে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করবেন। সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ কাজ মনিটর করবেন এবং ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন আয়োজনের পরিবেশ গড়ে তুলবেন।”

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জানান, প্রতিটি থানার জন্য টিম গঠনের দায়িত্ব মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী ও জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও সদস্য সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের উপর অর্পণ করা হয়েছে।

“তারা ৭ দিনের মধ্যে সাংগঠনিক টিম গঠন করে কেন্দ্রকে অবহিত করবেন। কোথাও কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে মহানগর নেতৃবৃন্দ, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করবেন। আমরা আশা করছি দল সংগঠিত করার ক্ষেত্রে আজকের সভার আন্তরিক আলোচনা, পর্যালোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

এসব কার্যক্রম শেষ হলে নগরের ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।

নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেসব ইউনিট নিয়ে বির্তক ও অভিযোগ তা অনুসন্ধানে ছয় সদস্যের রিভিউ কমিটি করা হয়েছে। এর প্রধান হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

“যাচাই করে ১৫দিনের মধ্যে আমরা কেন্দ্রকে জানাব। ১৪টি থানা সাংগঠনিক টিম করা হবে। তারা সমস্যা বিষয়ে জানাবেন। তারপর কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে। সে পর্যন্ত ওয়ার্ড বা থানা সম্মেলন আয়োজন হবে না।”  

জানতে চাইলে সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবাই একযোগে কাজ করব এবং কোনো দূরত্ব যাতে আমাদের মাঝে না থাকে সে আলোচনা হয়েছে। বহু আগেই দল থেকে বলা হয়েছিল, মহানগর আওয়ামী লীগ যেন থানাগুলোকে মনিটর করে। এজন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।

“তারা প্রতিটি থানার জন্য নগর কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অর্ন্তভুক্ত করে সবগুলো থানার জন্য মনিটরিং সেলগুলো গঠন করবে। ইউনিট কমিটির মধ্যে যদি কোনো ত্রুটি থাকে, তা নিজেরা বসে ঠিক করে নিব।

নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “ইউনিটের পর ওয়ার্ড সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম থেকে যে কেন্দ্রীয় নেতারা আছেন, তাদের সম্পৃক্ত করব।”

ছয় সদস্যের কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, “ছয় জন সম যোগ্যতার নেতা। কাউকে প্রধান করেনি। ছয়জনের নামই তালিকায় দেখেছি। অ্যালফাবেটিক্যালি কারো নাম আগে-পরে হতে পারে।

“আমাদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে সক্ষম। সংগঠন পরিচালনায় আমরা বহু সংকট অতিক্রম করে এই পর্যন্ত এসেছি। কারো ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু সংগঠনের জন্য কারো অবদানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, এটা যেন প্রতিহিংসায় না হয়, সিনিয়র হিসেবে আমাদের তা দেখতে হবে।”

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে দীর্ঘ দিন ধরে দুটি ধারা চলছে। এর একটি নগর কমিটির সভাপতি ও তিনবারের মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী, আরেকটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্যসাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।

চট্টগ্রাম নগরের ওয়ার্ডগুলোর অধীনে এসব শাখার সম্মেলন ১৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়। প্রথম দিন থেকেই সম্মেলনস্থল ঘিরে অবস্থান, পাল্টা সম্মেলন ও এমনকি জ্যেষ্ঠ নেতাকে অবরুদ্ধ করে রাখার মত ঘটনাও ঘটেছে।

শুরু থেকেই মহিউদ্দিনের অনুসারীদের সদস্য ফরম না দেওয়া, সম্মেলনে তাদের আমন্ত্রণ না জানানো, নগরের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সম্মেলন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত না করা, একপক্ষীয় সম্মেলন আয়োজন ও কমিটিতে জ্যেষ্ঠদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে।

নগর আওয়ামী লীগের ১৫টি থানা, ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড এবং ১২৯টি ইউনিট আছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০টি ইউনিটের সম্মেলন হয়েছে। যা একতরফাভাবে করা হয়েছে বলে নাছির পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ মহিউদ্দিনের অনুসারীদের।

তৃণমূলের এসব কমিটির শেষ সম্মেলন হয়েছিল দেড় থেকে দুই দশক আগে। আর কেন্দ্র থেকে নগর আওয়ামী লীগের সব শেষ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর।