‘কোর্ট হিল’ নিয়ে বিরোধ দ্রুতই মিটবে, আশা আইনমন্ত্রীর

চট্টগ্রামের আদালত ভবন যেখানে, সেই ‘কোর্ট হিল’ বা ‘পরীর পাহাড়ে’ নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে আইনজীবী ও জেলা প্রশাসনের চলমান বিরোধ ‘খুব দ্রুতই’ মিটবে বলে আশা প্রকাশ করছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2022, 03:43 PM
Updated : 15 Jan 2022, 03:43 PM

শনিবার বেলা ৩টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির মিলনমেলা-২০২১ এ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন আশার কথা শোনান।

চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রে ওই পাহাড়ে ওঠার ঢালে আইনজীবীদের বর্তমান পাঁচটি ভবনের পাশে আরও দুটি নতুন ভবন করা নিয়ে আইনজীবী সমিতি ও জেলা প্রশাসনের দ্বন্দ্বের বিষয়টি গত বছর সেপ্টেম্বরে সামনে আসে।

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির দুই নতুন স্থাপনা নির্মাণকে জেলা প্রশাসন বলছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। আর সমিতির দাবি, নিয়ম মেনে ‘অনুমোদন’ নিয়েই তারা ভবন করছেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও দায়িত্বশীল। যে সমস্যার আপনারা এখন সম্মুখীন হচ্ছেন। আমি পার্টিগুলোর নাম না বলি। যেভাবে ধৈর্য্য ও এটিচিউড আপনারা দেখিয়েছেন। তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

“আমি মনে করি আপনারা অনেক উত্তপ্ত হতে পারতেন। আলোচনা না করতে পারতেন। বলতে পারতেন, আমাদের জায়গায় আমরা থাকব। তবে আপনার যে ভূমিকা নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। এ ব্যাপারে আমি কৃতজ্ঞ।”

আনিসুল হক বলেন, “আমার মনে হয়, নিশ্চয়ই এর সমাধান করতে পারব। সকল পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে এটা শেষ হোক সেটাই চাই। এটার একটা ন্যায় সঙ্গত সুষ্ঠু সমাধান হবে।

“শুধু আশাবাদী না, আমি বিশ্বাসী। অতি শিগগির করে ফেলব। কিছুটা দেরি হচ্ছে এই অতিমারী পরিস্থিতির কারণে।”

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে আইনজীবী সমিতির বর্তমান ও সাবেক নেতারা আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের প্রশ্নে নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা জানান।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন বলেন, “সমিতির পরিধি অনেক বেড়ে গেছে। পুরনো ভবন মেরামতে খরচও বাড়ছে। তাই চেম্বার সংকট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

“দীর্ঘদিনের পার্কিং দখলে নিতে ডিসি সাহেব উদ্যোগ নেন। বাধা দিয়েছি। পুরোটা দখলে নিতে চেষ্টা করেছিলেন। সৌন্দর্য বর্ধনের নামে গাড়ি পার্কিং সরু করে ফেলেছেন।”

আইনমন্ত্রীকে এসব সমস্যা সম্পর্কে জানানো হয়েছে এবং সমাধানের জন্য তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আইনজীবীদের মানমর্যাদা রক্ষায় কোনো কম্প্রোমাইজ করব না।”

জিয়া উদ্দিন বলেন, “পার্কিং ও সেবা প্রার্থীদের চলাচলের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে চিঠি দিয়েছি। তা করেনি। তাই ১৮ জানুয়ারি দুপুরে সমাবেশ হবে। চেম্বার সংকট আইনজীবীদের জন্য। এটা কোনো নির্বাচনী ইস্যু নয়।

‘কোর্ট হিল’ বা ‘পরীর পাহাড়ে’ বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন এবং আইনজীবীদের পাঁচটি ভবনসহ বেশ কিছু সরকারি কার্যালয় রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, সেখানে তাদের ভবনগুলো অবৈধ উল্লেখ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- সিডিএ এবং গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।  

“সিডিএ বলেছে,তারা (আইনজীবী সমিতি) চৌহদ্দি মূলে মালিক। তাদের সীমানায় ভবন হয়েছে। কাগজ দেখে নকশা অনুমোদন দিয়েছি। সিডিএ বলে দিয়েছে তাই কোনো সুযোগ নেই।”

জিয়া উদ্দিন বলেন, “এরপরও তিনি (ডিসি) বিভিন্ন সচিবকে এনে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান। এই পাঁচ ভবনে হাত দেওয়ার কোনো অধিকার জেলা প্রশাসকের নেই।”

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আগে নতুন চেম্বার ভবনের কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি। ওইদিন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের তারিখ ধার্য করা আছে।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান বলেন, “কোভিডের পাশাপাশি আপনারা আরেকটা ফাইটে আছেন। সহযোদ্ধা হিসেবে সাথে আছি। সচিব মহোদয়কে নিয়মিত মন্ত্রণালয়ে জানাই। চেষ্ঠা করছি যেন পজেটিভ সমাধান আসে।”

আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বার কাউন্সিলের সদস্য আইনজীবী নেতা মুজিবুল হক বলেন, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, অতীত ঐতিহ্য অবগত না থেকে ডিসি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সমিতির মানসম্মান ভুলুণ্ঠিত করছেন।

“ওনার প্রতিটি কথার জবাব আমাদের কাছে আছে। সমিতির সদস্যদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা জীবন দিতে পারি কিন্তু ঐতিহ্যের একবিন্দুও ছাড় দেব না। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।”

এসময় তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “লাগামহীন বক্তব্য ও চিঠি চালাচালি যদি বন্ধ না করে এবং চলাচলের পথ উন্মুক্ত না করে তাহলে সমিতির কঠোর কর্মসূচিতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি হলে এর দায়িত্ব ডিসিকেই নিতে হবে।”

আদালত ভবন এলাকায় আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যেই সম্প্রতি ‘পরীর পাহাড়ের’ ১৩০ বছরের পুরনো দ্বিতল আদালত ভবনটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ওই পাহাড়ে থাকা চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিস এবং নগরীর অন্যত্র থাকা সরকারি দপ্তর মিলিয়ে মোট ৪৪টি সরকারি অফিস যাবে কালুরঘাটে।

পাহাড়ে নতুন স্থাপনা নির্মাণ না করতে এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণে ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে তাতে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর পরীর পাহাড়কে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের প্রস্তাব বিবেচনা করার কথাও জানিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ওই পাহাড়ের চূড়ায় পুরাতন আদালত ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৮৯৩-৯৪ সালে। পুরনো ভবনটি ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হলে ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবিতে চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ আন্দোলন গড়ে তোলে।

পরে ২০১০ সালে পুরাতন ভবনের পেছনে চারতলা নতুন আদালত ভবন নির্মাণ করা হয়। সংস্কারের পর শতবর্ষী পুরাতন আদালত ভবনটি তখন থেকে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম সারওয়ার, অ্যাটর্নি জেনারেল এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, মুখ্য মহানগর হাকিম রবিউল আলম, সভাপতি এনামুল হক ।  

আরও পড়ুন