সূর্য সেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি

চট্টগ্রামে যুব বিদ্রোহের নায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের ফাঁসির দিবসে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2022, 04:07 PM
Updated : 12 Jan 2022, 04:07 PM

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মাস্টারদা সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়।

বুধবার সকালে নগরীর জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে মাস্টারদার আবক্ষ মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ। 

সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিঞ্চন ভৌমিক বলেন, “বিপ্লবীদের স্বার্থক উত্তরসূরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী  যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র আমাদেরকে উপহার দিয়ে যান।

“অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীতে বিপ্লবীদের কোনো সম্মান প্রর্দশন করা হয়নি। প্রতিদিন কোনো না কোনো দিবস আমরা পালন করলেও বিপ্লবীদের কোনো দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন হয় না। এমনকি ফাঁসি দিবস ও যুব বিদ্রোহ দিবসে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কোনো বাণীও দেওয়া হয় না।”

পরিষদের সভাপতি শিক্ষক অঞ্জন কান্তি চৌধুরী বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ঐতিহাসিক নিদর্শন চট্টগ্রাম কারাগারে ফঁসির মঞ্চে তারকেশ্বর দস্তিদারের নাম ও ম্যুরাল সংযুক্ত করার ব্যাপারে প্রশাসনের নিরবতা আজও ভাঙেনি।”  

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সহ-সভাপতি শিক্ষক কৃষ্ণ শেখর দত্ত, উপদেষ্টা শিক্ষক বিজয় শংকর চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক তপন ভট্টাচার্য্য, বিপ্লবী পরিবারের সদস্য নন্দন কিশোর চৌধুরী, সাংবাদিক জসীম উদ্দিন, রুবেল পাল, কবি সজল দাশ।

পরে পরিষদ নেতারা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির মঞ্চে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

এদিকে চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পক্ষে চার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতারা জে এম সেন হলে সূর্য সেনের ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক কাউন্সিলর শহীদুল আলম, নগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর, দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নুরুল আলম মিয়া, সাবেক যুবলীগ নেতা বখতিয়ার ফারুক, নগর যুবলীগের সদস্য কফিল উদ্দিন, এ কে খান তাহের, মোহাম্মদ ইয়াসিন, বিপ্লব চৌধুরী প্রভাত প্রমুখ।

এক বার্তায় শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, “সেসময়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার অধিকারসহ বিপ্লবের অগ্রনায়ক ছিলেন মাস্টারদা। সূর্য সেন স্বাধীনতা সংগ্রামের জমি তৈরি করছিলেন। আজও বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে মাস্টারদাকে স্মরণ করে আমরা এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাই। তিনি বাঙালির বিপ্লবের ধ্রুবতারা।”

বিকেলে যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল শিকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল সামির, সহ সাধারণ সম্পাদক জাবেদুর রজমান, শান্তনু বিশ্বাস ও টুটুন দাশ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

যুব ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ যুব বিদ্রোহের স্মৃতি বিজড়িত স্থান ও ইতিহাস সংরক্ষণের দাবি জানান। পাশাপাশি চট্টগ্রাম কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানায়।

যুব বিদ্রোহের নেতা বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের ফাঁসি দিবসে বিপ্লবীদের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা চট্টগ্রাম মহানগর শাখাও।

জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা জানিয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শিবু প্রসাদ চৌধুরী বলেন, “ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে পথ দেখিয়েছিলেন সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সাহসী যোদ্ধারা, ইতিহাসে তা ছিল একটি বিরল ঘটনা।

“১৯৩০ সালের যে রাতে চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুট করা হয়, সেই রাতে অস্ত্রাগারের মাঠে জাতীয় পতাকা তোলা হয়। এ সময় এ বিদ্রোহের সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন ওই পতাকার তলে দাঁড়িয়ে চট্টগ্রামের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বিপ্লবীদের সেসব স্মৃতি সংরক্ষণ করতে হবে।”

এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি জাফর আল তানিয়া, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম, সহ-সভাপতি মনির ইসলাম, জাহিদ হাসান সাইমুন, সাফায়েত হোসেন রাজু, জাহেদ অভি, আমিনুল ইসলাম রাশেদ, আব্বাস উদ্দীন, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মায়মুন উদ্দীন মামুন, মোহাম্মদ রুবেল, আরফাতুল ইসলাম মিশন, শুভ দত্ত, যুবরাজ দাশ প্রমুখ।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দেন মাস্টারদা সূর্য সেন। ভারতীয় প্রজাতান্ত্রিক বাহিনী, চট্টগ্রাম শাখা গঠন করে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের। তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল, ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমন এবং জালালাবাদ যুদ্ধ হয়।

১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ইংরেজ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সূর্য সেন ও বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।