‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ অভিযোগ অস্বীকার সাংসদ মোছলেমের

ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৫ লাখ টাকার ঘুষ নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তার সঙ্গে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রামের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2022, 01:04 PM
Updated : 12 Jan 2022, 01:04 PM

বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের খবরকে ‘চক্রান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

গত ৬ জানুয়ারি ‘অ্যাডিশনাল পি পি কামাল উদ্দীন’ নামের একটি ফেইসবুক আইডি থেকে ১৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেওয়া হয়। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ১০ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসেন কবীর।

আসামি মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক। তিনি চট্টগ্রাম জজ আদালতে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর।

কামাল উদ্দীন ফেইসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, সাতকানিয়া উপজেলার ১৭ নম্বর সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘মনোনয়ন পাইয়ে’ দেওয়ার কথা বলে হোসেন কবীর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদের নাম করে তার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকার একটি চেক নিয়েছিলেন।

এর ‘প্রমাণ’ হিসেবে সোনালী ব্যাংক কোর্ট হিল শাখার একটি চেকের ছবিও ফেইসবুকে দেন কামাল উদ্দীন। ‘মোসলেম উদ্দিন আহমেদ’ নামে ইস্যু করা চেকটির নিচে কামাল উদ্দিনের নামে স্বাক্ষরও দেখা যায়। তবে কোনো তারিখ লেখা ছিল না।

পরে ওই পোস্টটি সরিয়ে ফেলেন কামাল উদ্দিন। এদিকে মামলার দিনই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন। বুধবারের সংবাদ সম্মেলন করে আবারও তিনি নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।

যিনি ফেইসবুকে ওই পোস্ট দিয়েছেন, তার সঙ্গে ‘কোনো সম্পর্ক নেই এবং দেখাও হয়নি’ দাবি করে মোছলেম বলেন, “এটা আমার ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনের বিষাদ। এ ধরনের ঘটনায় আমি মর্মাহত, আমার সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।”

অভিযোগের সাথে নিজের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে যে কোন শাস্তি ‘মেনে নেওয়ার’ কথাও বলেন এ সাংসদ।

তার ভাষ্য, “যিনি এটা করেছেন, সেটা কিসের বশবর্তী হয়ে করেছেন, সেটা আমি জানি না। সর্বশেষ তিনি (পোস্টদাতা) গতকাল একটা লাইভ দিয়ে আমার সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।”

সাংসদের শঙ্কা, তার রাজনৈতিক জীবনের ক্ষতি করতে কেউ ‘ইন্ধন দিয়ে এ ধরনের পোস্ট দেওয়াচ্ছেন’। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন খুঁজে দেখবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মোছলেম উদ্দিন বলেন, “যিনি এ পোস্ট দিয়েছেন, তিনি লাইভে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়েছেন। এ জন্য আমি তার শাস্তি দাবি করব না। তার নিরাপত্তা দাবি করব। তাকে কেউ আক্রমণ করে আবার আমার পেছনে লাগিয়ে দেবে। আপনারা জানেন, আমি জীবনে কোনো দিন বডিগার্ড নিয়েও হাঁটি না। আমি এ ধরনের সন্ত্রাসী রাজনীতি কোনো দিনও করিনি।”

চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে ওই আসনের সংসদ নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন।

ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তিনি বলছেন, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দলে তার জায়গায় (দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি) পরিবর্তন আসতে পারে, এমন ধারণা থেকে তার অগোচরে এ ধরনের ‘অপবাদ রটানো’ হচ্ছে।

“যে ব্যক্তি এ পোস্ট দিয়েছেন, তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। কখনও সে আমাকে মনোনয়ন সম্পর্কে বলেও নাই। আমার সঙ্গে তার দেখাও হয়নি। তিনি আমার দলের লোক বলে জানি।

“নিয়ম মাফিক তিনি দলীয় হাই কমান্ডের কাছে বিচার দিতে পারতেন। তা না করে উনি বাইরে দিয়ে… কারণ আমিতো ব্যক্তি মোসলেম উদ্দিন নয়। আমি একটি সংগঠনের দায়িত্বে আছি। এতে আমার সাথে সাথে আমার দলওতো বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে।”

ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের। সেখানকার নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূল থেকে মনোনয়ন তালিকা পাঠানো হয়।

“চট্টগ্রামে আটটি উপজেলায় তৃণমূল পর্যায়ে সভা করেছি। সভায় যারা যারা প্রার্থী হতে চান, তাদের আহ্বান জানিয়েছি; তারা নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে প্রত্যেক প্রার্থীর মাইকে বক্তব্য নিয়েছি। তিনি সকলের সামনে ঘোষণা করেছেন – ‘আমি… নৌকার মনোনয়ন চাই। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে সকলকে নিয়ে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করব। আমাকে যদি মনোনয়ন দেওয়া না হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষে নির্বাচনে কাজ করব, নৌকার বিজয় নিশ্চিত করব।’ এ ধরনের অঙ্গীকার আমরা নিয়েছি।”

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে জেলার সভাপতি, সম্পাদকের স্বাক্ষরে কেন্দ্রে প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা পাঠানো হয়েছে বলেও দাবি করেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম।

তিনি বলেন, “তিন জনের কথা থাকলেও আমরা কোনো কোনো জায়গায় পাঁচ থেকে সাতজনও পাঠিয়েছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যার নাম ১ নম্বরে আছে, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। অধিকাংশ জায়গায় যেখানে গতবার চেয়ারম্যান ছিল, তাদের দেওয়া হয়েছে।

“এমনও দেখা গেছে, গতবার চেয়ারম্যান ছিল এবার দেওয়া হয়নি। এখানে একক ভাবে কাউকে মনোনয়ন দিয়ে দেওয়ার বা অনৈতিক কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ভাইস চেয়ারম্যানরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।