মনোনয়ন পেতে ‘ঘুষ’, ফেইসবুকে লেখার পর যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ তুলে ফেইসবুকে লেখার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে চট্টগ্রামের এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2022, 03:03 PM
Updated : 10 Jan 2022, 03:03 PM

সোমবার চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এস কে এম তোফায়েল হাসানের আদালতে মামলাটি করা হয়।

মামলার বাদী হোসেন কবীর চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আসামি মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক। তিনি চট্টগ্রাম জজ আদালতে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটার পদে আছেন।

গত ৬ জানুয়ারি ‘এ্যাডিশনাল পি পি কামাল উদ্দীন’ নামের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেওয়া হয়।

তাতে কামাল উদ্দীন অভিযোগ করেন, সাতকানিয়া উপজেলার ১৭ নম্বর সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে হোসেন কবীর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মোসলেম উদ্দিন আহমদের নাম দিয়ে তার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকার একটি চেক নিয়েছিলেন।

কামাল লেখেন, “আমাকে মনোনয়ন দেয়া দূরে থাক, কেন্দ্রে আমার নামটি পর্যন্ত পাঠায়নি। এখন আমি আমার চেক ও টাকা ফেরত চাই। অন্যথায় আমি বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হব এবং ফৌজদারি মামলা করতে বাধ্য হব।”

পোস্টে সোনালী ব্যাংক কোর্ট হিল শাখার একটি চেকের ছবিও দেন কামাল উদ্দীন। ‘মোসলেম উদ্দিন আহমেদ’ নামে ইস্যু করা চেকটির নিচে কামাল উদ্দিনের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে ওই চেকে কোনো তারিখ লেখা ছিল না।

পরে কামাল উদ্দীন ফেইসবুক পোস্টটি সরিয়ে ফেলেন। এরপর শনিবার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ফেইসবুকে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি খোলা চিঠিও লেখেন তিনি।

সোমবার করা মামলার বাদী হোসেন কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই কামাল উদ্দীনকে আমি চিনি। কিন্তু গত ৫-৭ বছর ধরে কোনো যোগাযোগ নেই। এর মধ্যে কখনও দেখা বা কথাও হয়নি। তাহলে সে যে চেক দেওয়ার অভিযোগ করছে, ওই ঘটনা কোথায় ঘটেছে? সে প্রার্থী হতে চায় সেটাও কখনো বলেনি।

“মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ করে এমপি সাহেবের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়। নিশ্চয় এর নেপথ্যে অন্য কেউ আছে। না হলে এত দুঃসাহস কী করে হয়?”

হোসেন কবীরের আইনজীবী মির্জা কছির উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কামাল উদ্দীন একজন আইনজীবী হয়ে কি আইন-কানুন জানেন না? ফেইসবুকে যে কোনো পোস্ট দিলেই তো হল না। যে অ্যাকাউন্টের চেক তিনি দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন, তা যাচাই করে দেখা গেছে সেখানে কোনো টাকা নেই। ওই ধরনের চেক এখন চলেও না।”

তিনি জানান, আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত করে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছে।

অতিরিক্ত পিপি কামাল উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আজ যে মামলা করা হয়েছে, তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আইনজীবী হিসেবে আইনগতভাবে তা মোকাবেলা করব।”

তিনি বলেন, “ওই পোস্ট দেওয়ার পর থেকে আমাকে লোকজন টেলিফোনে হুমকি দিচ্ছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। হোসেন কবীর উপজেলার যুগ্ম সম্পাদক। তিনি বলেছেন মনোনয়ন নিয়ে দিবেন। তিনিই বলেছেন, লিডারের (সাংসদ) নামে চেক দিতে।”

সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার চরিত্র হননের জন্য কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করছে। কামাল উদ্দীন নামের ওই লোকের সাথে আমার কোনো কথাবার্তাই হয়নি।

“মনোনয়নের জন্য তৃণমূল থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছিল। তারপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মত নেওয়া হয়। এরপর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কারও সাথে লেনদেনের প্রশ্নই আসে না। আমার নাম ব্যবহারেরও কোনো সুযোগ নেই।”

প্রবীণ এ্ রাজনীতিক বলেন, “হলফ করে বলতে পারি এ ধরনের কোনো অনৈতিক কাজে আমি অতীতেও ছিলাম না, এখনও নেই।”

মামলার বাদী এজাহারে বলেছেন, সাংসদ মোসলেম উদ্দিন আহমদের সম্মতি নিয়ে তিনি মামলাটি করেছেন। এ মামলায় সাংসদকে সাক্ষীও করা হয়েছে।

সাংসদ মোসলেম উদ্দিন আহমদের সঙ্গে কখনও মনোনয়ন বিষয়ে দেখা বা কথা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে কামাল উদ্দীন বলেন, “না, উনার সাথে যোগাযোগ বা কথা হয়নি। সাতকানিয়ায় সব মনোনয়ন হোসেন কবীরের মাধ্যমে হয়েছে বলে জানি। এমপির সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি।”