বাংলাদেশ পথেই আছে: অনুপম সেন

বঙ্গবন্ধু এমন একটি দেশ চেয়েছিলেন, যে দেশ কারো কাছে মাথা নোয়াবে না; বাংলাদেশ সে লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2022, 01:20 PM
Updated : 10 Jan 2022, 01:20 PM

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোমবার চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুপম সেন বলেন, “বাঙালির ইতিহাসে অসাধারণ দিনগুলো হল ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৭ মার্চ এবং ১০ জানুয়ারি।

“কয়েক হাজার বছর ধরে বিভিন্ন বর্ণের সংমিশ্রণে এই বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে। অত্যন্ত সম্পদশালী ছিল বাংলা। সেই দেশ ১৯০ বছর ব্রিটিশরা শাসন করেছে। বঙ্গবন্ধুকে কেন সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলা হয়? মহৎ বাঙালির তো অভাব নেই, বাংলা ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ; কিন্তু নিজের রাষ্ট্র উনার আগে কেউ গড়তে পারেনি।”

সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন বলেন, “১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হল। ৫৬ শতাংশ মানুষ বাঙালি। কিন্তু মুসলিম লীগ নেতারা পশ্চিম পাকিস্তানি। সব কাজ হল সেখানে। অথচ হবার কথা ছিল পূর্ব পাকিস্তানে।

“১৯৪৮ সালে জিন্নাহ সাহেব ঢাকায় এসে ঘোষণা করলেন, উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তখন থেকে বঙ্গবন্ধু বুঝেছেন, বাঙালির স্বাধীনতা ছাড়া পথ নেই। তিনি ভাষা সংগ্রাম পরিষদ করলেন। সেই জেল জীবন শুরু। সারাজীবনে ১৩ বছর তিনি জেলে ছিলেন।” 

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুপম সেন বলেন, ১৯৫৬ সালে এদেশে ভুখা মিছিল হয়েছে। ১৯৭০ সালেও সিংহভাগ লোক ছিল দারিদ্র সীমার নিচে। এখন কৃষি জমি কমেছে, কিন্তু উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা ‘নিশ্চিত করেছে’।

“আজ বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। বাঙালির প্রথম স্বাধীনতা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। বঙ্গবন্ধু একটি যুদ্ধ বিধস্ত দেশ পেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন এমন একটি দেশ, যেটি কারো কাছে মাথা নোয়াবে না। দেশটি যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়।”

তিনি বলেন, “শৈশবে আমরা কঠোর দারিদ্র্য দেখেছি। পাট ছাড়া কোনো শিল্পই এদেশে ছিল না। আজ কত শিল্প দেশে। কত এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, এটা বটমলেস বাস্কেট কেইস। সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়।

“বঙ্গবন্ধুই সবকিছু শুরু করেছিলেন। যুদ্ধ বিধস্ত দেশ, তখন বিশ্বজুড়ে মন্দা, জ্বালানির দামে ভয়াবহ উল্লম্ফন দেখেছি। সে অবস্থায় বঙ্গবন্ধু যাত্রা শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শোষিতের গণতন্ত্র চেয়েছিলেন, শোষকের নয়। আমরা চাই, সঠিক শিক্ষার সুযোগ পাক সবাই। স্বাস্থ্য সেবা পাক। এ খাতে খুব কম ব্যয় করা হয়। আমরা এগোচ্ছি। যদি আসল খাতে বিনিয়োগ না হয়, তাহলে তা স্তব্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দিতে হবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে।”

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান বলেন, পরাধীন বাঙালি হাজার বছর ধরেই মুক্তির বাসনায় ছিল, সেটা সবসময় অঙ্কুরেই ভেসে গেছে।

“কিন্তু একজন নেতা বাঙালির অন্তর আত্মাকে বুঝতে পেরেছিলেন। বাঙালির চাওয়া-পাওয়া আত্মস্ত করে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা ও বিজয় অবশেষে ধাপে ধাপে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই এসেছে।

“স্বাধীন জাতিসত্তা, দেশ, ভূখণ্ড আমরা পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিজয়ের পূর্ণতা দিবস ১০ জানুয়ারি। ১৬ ডিসেম্বরের পর ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। যেই বঙ্গবন্ধু ফিরলেন জানুয়ারিতে ২৫টা, ফেব্রুয়ারিতে ৫০টা দেশ স্বীকৃতি দিল। আমাদের অস্তিত্বের জন্য বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসাটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মনোয়ারুল হক শামীম।

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার সঞ্চালনায় সেমিনারে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ডা. দেলোয়ার হোসেনও বক্তব্য দেন।

অন্যদের মধ্যে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হাসিনা নাসরীন, উপ-কলেজ পরিদর্শক ডা. আইরীন সুলতানা, বিআইটিআইডির উপ-পরিচালক ডা. বখতিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।