জ্যেষ্ঠ নেতাদের ‘অসন্তোষ’, পেছাল তৃণমূলে আ. লীগের সম্মেলন

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলে সদস্য সংগ্রহ ও কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের অসন্তোষের মধ্যে ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2021, 04:12 PM
Updated : 23 Dec 2021, 04:12 PM

দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ৮ জানুয়ারি নগর শাখার কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে নেতারা জানান।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন জানান, ওয়ার্ড সম্মেলন না হলেও এর অধীনে শাখাগুলোর সম্মেলন ৫ জানুয়ারির মধ্যে শেষ হবে।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে দীর্ঘ দিন ধরে দুটি ধারা চলছে। এর একটি নগর কমিটির সভাপতি ও তিনবারের মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী, আরেকটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্যসাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।

চট্টগ্রাম নগরের ওয়ার্ডগুলোর অধীনে এসব শাখার সম্মেলন ১৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়। প্রথম দিন থেকেই সম্মেলন স্থল ঘিরে অবস্থান, পাল্টা সম্মেলন ও এমনকি জ্যেষ্ঠ নেতাকে অবরুদ্ধ করে রাখার মত ঘটনা ঘটেছে।

শুরু থেকেই মহিউদ্দিনের অনুসারীদের সদস্য ফরম না দেয়া, সম্মেলনে তাদের আমন্ত্রণ না জানানো, নগরের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সম্মেলন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত না করা, একপক্ষীয় সম্মেলন আয়োজন ও কমিটিতে জ্যেষ্ঠদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে।

গত বুধবার নগর কমিটির চার সহ-সভাপতিসহ ছয় জ্যেষ্ঠ নেতা ঢাকায় গিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সাথে দেখা করেন।

তাদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৮ জানুয়ারি মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন উপস্থিত থাকবেন।

“আমরাও সব পর্যায়ে সম্মেলন চাই। তবে গঠনতন্ত্র অনুসারে যেন হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, আপাতত তৃণমূলের সম্মেলন বন্ধ থাকবে। সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলে তারপর শুরু হবে। আমরা বলেছি, পুরনোদের সম্মান দেখাতে হবে এবং নতুনদের মূল্যায়ন করতে হবে। এভাবে সমন্বয় করে যেন তৃণমূলের সম্মেলন হয়।”

জানতে চাইলে মাহবুব উল আলম হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রামের নেতারা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তৃণমূলের সম্মেলনের বিষয়ে আগের নির্দেশনা বহাল আছে।

গত ২১ জুন চট্টগ্রামে দুই দিনের সাংগঠনিক সভা শেষে ৫টি নির্দেশনার কথা বলেছিলেন হানিফ। এর মধ্যে ছিল- বিদ্রোহী প্রার্থীদের কোনো পদে না রাখা, কমিটি গঠনে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়, সদস্য পদ প্রদানে যাচাই-বাছাই, সদস্য সংগ্রহ ও ইউনিট-ওয়ার্ড-থানায় সম্মেলন আয়োজন।

তৃণমূল সম্মেলন নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের অসন্তোষের বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কাউন্সিলে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি দুই রকম প্রতিক্রিয়া থাকবে- সেটাই স্বাভাবিক।

এজন্য ইউনিট সম্মেলন শেষে ৮ জানুয়ারি নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসবেন জানিয়ে স্বপন বলেন, ‘চুলচেরা বিশ্লেষণ’ করে ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হবে।

“সম্ভাব্য সকল অসন্তুষ্টি আলোচনার টেবিলে বসে যুক্তিযুক্ত ও ন্যায়সঙ্গতভাবে সমাধানে আমরা বিশ্বাসী। কাউন্সিল নিয়ে দলে যেন বড় ধরনের গ্রুপিং সৃষ্টি না হয় সেদিকে যত্নশীল।”

সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সঙ্গে গতকাল তার কথা হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “উনারা বলেছেন, ইউনিট সম্মেলন যেভাবে চলছে, চলবে। সেগুলো শেষ হওয়ার পর ৮ জানুয়ারি উনারা আসবেন। সেদিন কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় উনারা ওয়ার্ড সম্মেলন শুরুর সময় ও নির্দেশনা দেবেন।”

একটি ওয়ার্ডের (বাগমনিরাম) সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল জানিয়ে নাছির বলেন, “সেটি না করে দিয়েছি। আগে ইউনিট শেষ হবে তারপর ওয়ার্ড। ১২৯টির মধ্যে ৯৩টি ইউনিটের সম্মেলন শেষ হয়েছে। ৫ জানুয়ারির মধ্যে সব শেষ হবে। ১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি ওয়ার্ড সম্মেলন শুরুর বিষয়ে আশাবাদী।”

নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রের নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করার বিষয়ে জানতে চাইলে নাছির বলেন, “যে কেউ দেখা করতে পারেন। বড় সংগঠনে সবাই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করতে পারে।”

নগর আওয়ামী লীগের ১৫টি থানা, ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড এবং ১২৯টি ইউনিট আছে। তৃণমূলের এসব কমিটির শেষ সম্মেলন হয়েছিল দেড় থেকে দুই দশক আগে। আর কেন্দ্র থেকে নগর আওয়ামী লীগের সব শেষ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর।

আরও পড়ুন