৪০ বছর বয়সী মো. এয়াকুব সারা গায়ে কাদা মেখে হাতে অস্ত্র আর মাথায় পতাকার রঙে টুপি পরে এসেছিলেন মুক্তিযোদ্ধার বেশে। সঙ্গে আরও দুজনকে রাজাকারের বেশে কোমরে রশি বেঁধে নিয়ে এসেছিলেন। বিজয় দিবসের সকালে তাদের দেখতে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ছোটখাটো ভিড় জমে যায়।
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে চট্টগ্রামে নানা আয়োজনে স্মরণ করা হল মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের; লাল সবুজের পতাকা হাতে পথে পথে হল বিজয়ের উৎসব।
বৃহস্পতিবার বিজয় দিবসের সকাল থেকে বন্দরনগরীর সব বয়স আর সব শ্রেণি পেশার মানুষ মেতে ওঠে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তির বর্ণিল আয়োজনে।
এরপর একে একে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, নগর পুলিশের কমিশনার সালেহ মো. তানভীর, সিডিএ চেয়াম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম ও সিভিল সার্জন ডা. মো ইয়াছিন চৌধুরী ফুল দেন শহীদ মিনারে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ, রেলওয়ে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর, আনসার ও গ্রাম প্রতিক্ষা বাহিনী, এপিবিএনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে দলের নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান। সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও খোরশেদ আলম সুজন, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, তথ্য সম্পাদক চন্দন ধর উপস্থিত ছিলেন এ সময়।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে শহীদ মিনারে সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে চলমান সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজের কারণে এবার প্রবেশ পথ করা হয়েছে সিনেমা প্যালেসের দিক থেকে। আর থিয়েটার ইন্সটিটিউটের দিকে ছিল বের হওয়ার পথ।
থিয়েটার ইন্সটিটিউটের সামনে দাঁড়িয়ে শহীদ মিনারে সমবেতদের কাছে জাতীয় পতাকা, পতাকা খচিত মাথার ব্যান্ডসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করছিলেন মধ্যবয়সী মো. জালাল উদ্দিন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, “বিক্রি ভালোই হচ্ছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে পতাকা বিক্রি করি। গত কয়দিন শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেছি। আজকের দিনে বেশি মানুষ শহীদ মিনারে আসে, তাই এখানে দাঁড়িয়েছি।”
বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয় বিজয় শোভাযাত্রা। রেলওয়ে জেলা পুলিশ, বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমি, মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমি, মেরিটাইম ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা জাতীয় পতাকা ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে অংশ নেন শোভাযাত্রায়।
এ শোভাযাত্রায় শ্রমিক স্কোয়াড ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে বেশি সদস্য নিয়ে।
নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রা শেষে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে গিয়ে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।