চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে ওই এলাকায় আগুন লাগার খবর পান তারা।
পরে আগ্রবাদ, বায়েজিদ বোস্তামি ও চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশনের ১১টি গাড়ি সেখানে গিয়ে প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তৈরি পোশাক ও ঝুট কাপড়ের ১১টি গুদাম রয়েছে। গুদামগুলোর মধ্যে একটি টিন আর বাঁশের তৈরি, বাকিগুলো পাকা। এর মধ্যে চার মালিকের পাঁচটি গুদামের মালামাল আগুনে পুড়ে গেছে।
তবে সেখানে কারও হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য মেলেনি। আগুন লাগার কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
পোড়া গুদামে ঝুটের স্তূপ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল দুপুর পর্যন্ত। মাঝে মাঝে বাতাসে সে ধোঁয়া পুরো এলাকা ঢেকে দিচ্ছিল। এর মধ্যেই গুদাম থেকে কাপড় বের করতে কাজ করছিলেন শ্রমিকরা।
ক্ষতিগ্রস্ত এক গুদামের মালিক মো. মোবারক জানান, তার গুদামে জ্বালানী কাজে ব্যবহারের ঝুট কাপড় রাখা হত। তার বেশিরভাগই পুড়ে গেছে।
“কিছুদিন আগে ২৯ লাখ টাকা ঝুট কাপড় এনেছিলাম। তার বাইরে আগেরও কিছু কাপড় ছিল। রাত দেড়টার সময়ও আমি গুদামে ছিলাম। বন্ধ করে বাসায় গিয়ে ভোরে আগুন লাগার সংবাদ পাই।”
তৈয়ব উল আলম ট্রেডার্স নামে আরেকটি গুদামের মালিক মা. ইসমাইল জানান, ওই এলাকায় তার ঝুট কাপড়ের পাশাপাশি তৈরি পোশাকেরের তিনটি গুদাম রয়েছে। এর একটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে।
তার যে গুদাম পুড়েছে, সেটির আয়তন প্রায় ১৮ হাজার বর্গফুট। সেখানে শীতের পোশাক ছিল। আর কিছু ছিল ঝুট কাপড়।
আগুনে অন্তত পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে দাবি করে ইসমাইল বলেন, “গতবছর করোনাকালে বিক্রি বন্ধ থাকায় বিপুল পরিমাণ কাপড় মজুদ ছিল। তার সাথে এবার শীতের কাপড়ও মজুদ করেছিলাম।”
তিনি বলেন, তার গুদামে প্রতিদিন ২০০ শ্রমিক কাজ করেন। আবার কিছু শ্রমিক ভ্যানে করে কাপড় ফেরি করেন।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকমকে বলেন, ওই এলাকায় গুদাম করা হলেও জরুরি সময়ে পানি পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে আগুন নেভাতে সমস্যা হয়েছে।
“আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও কাপড়ের ভেতরে আগুন রয়ে গেছে, সে কারণে এখনও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। এসব কাপড় বের করা গেলে আগুন পুরোপুরি নেভানো যাবে। আগুনের ধোঁয়া কমতে কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে। তবে এ অবস্থায় পুনরায় আগুন ছড়ানোর কোনো শঙ্কা নেই।”
গুদামে যেসব নিয়ম মেনে কাপড় রাখতে হয়, এখানে সে তা মানা হয়নি জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পারেননি।
“বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে হতে পারে, আবার সিগারেটের আগুন থেকেও ঘটতে পারে। সেটা তদন্ত করে বলা যাবে।”
বেকার হওয়ার শঙ্কায় শ্রমিকরা
গুদামে আগুন লাগার খবর পেয়ে শ্রমিকদের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন ওই এলাকায়। তাদের কেউ কেউ মালামাল বের করার কাজ করছেন, কেউ আবার বসে ছিলেন অসহায় দৃষ্টিতে।
তাদের মধ্যে লিটন মোহাম্মদ নামে একজন জানালেন, ইসমাইলের গুদাম থেকে কাপড় নিয়ে ভ্যানে ফেরি করে বিক্রি করতেন তিনি। তার মত আরও ১২ জন নগরীর বিভিন্ন সড়কে শীতের কাপড় ফেরি করতেন। মালিকের বেঁধে দেওয়া টাকার বাইরে যা আয় হত, তা তাদের। এভাবে মাসে মোটামুটি একটা রোজগার হত।
“গতকালও ফেরি করে কাপড় বিক্রি করেছি। আজকে সব কাপড় পুড়ে গেল। আমাদের আয় রোজগারের রাস্তাটাও বন্ধ হয়ে গেল।”