মঙ্গলবার রাতে নগরীর ষোলশহর ভূমি অফিস সংলগ্ন চশমা খালের ওই এলাকা ঘুরে দেখার পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
নিখোঁজ শিশু কামাল উদ্দিনের সাথে থাকা আরেক শিশু মো. রাকিব এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরাও একই তথ্য বলেছেন।
সোমবার বিকেলে কামাল নামের ১১ বছর বয়সী শিশুটি খালে তলিয়ে যায়। মঙ্গলবার সেই খবর পেয়ে ওই এলাকায় গিয়ে তল্লাশি শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
স্থানীয়দের বরাতে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরাও বলেছেন, কামাল ও রাকিব ময়লার স্তূপ থেকে ‘কিছু’ নিতে খালে নেমেছিল। পরে রাকিব উঠে আসতে পারলেও কামাল স্রোতের টানে তলিয়ে যায়।
রাতে পরিদর্শন শেষে সিটি মেয়র রেজাউল সাংবাদিকদের বলেন, “শিশুটিকে এখানে পড়ে যায়নি। তারা এখানে খেলনা দেখেছিল একটা। পরে লাফ দিয়ে তারা পানিতে নামে। রাকিবের সাথে কথা বলেছি। রাকিব বলেছে, সেই খেলনা নেয়ার পর তারা সাঁতরে এদিকে আসে। বোতল কুড়াচ্ছিল।
রাকিব বিকেলে সাংবাদিকদের বলে, প্লাস্টিকের একটি খেলনা দেখতে পেয়ে তারা পানিতে নামে। সেটা নিয়ে তারা সেখানে খেলছিল, ভেসে থাকা বোতল জড়ো করছিল। এক পর্যায়ে পানির টানে কামাল তলিয়ে যায়।
ছেলে না ফেরায় সোমবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে একাই ছেলের খোঁজ করেছিলেন কামালের বাবা আলী কাওসার। আশেপাশের কেউ তখন এগিয়ে আসেনি বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।
ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকার বাসিন্দা আলী কাওসারের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে কামাল সবার ছোট।
ঘটনাস্থলের কাছে একটি ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানের বিক্রয় কর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার বিকেলে তিনি দুই শিশুকে খালে সাঁতার কাটতে দেখেন। তবে এক শিশুর তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন মঙ্গলবার বিকেলে ফায়ার সার্ভিস আসার পর।
ফায়ার সার্ভিসের বায়েজিদ বোস্তামি স্টেশনের লিডার বিপ্লব চন্দ্র মালাকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার কামাল ও রাকিব খালে নেমে ময়লার স্তূপের মধ্যে থেকে কিছু একটা তুলতে চেয়েছিল। পরে তারা হঠাৎ করে আবর্জনার ভেতর ডুবে যায়। স্রোত তাদের টেনে নেয়। কিছু দূর গিয়ে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে রাকিব উঠে আসে। কিন্তু কামাল স্রোতের টানে চলে যায়।”
নালায় আবর্জনা জমে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে মেয়র রেজাউল বলেন, “চশমা হিলের দিক থেকে এদিকে পানি নামে। এখনো দেখেন এখানে ককশিট আর পলিথিন। দোকানদাররা যে ককশিট ফেলে সেগুলো এখানে জমে থাকে।
বারবার খাল-নালায় মানুষ পড়ে মৃত্যু ও নিখোঁজের ঘটনার পরও নিরাপত্তায় ব্যবস্থা কেন হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, “জলাবদ্ধতায় মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। সেসব খালে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড কাজ করছে। সেখানে নালায় কী করে স্ল্যাব দেব বলেন? যে সমস্ত নালায় কাজ চলছে না, সেখানে অলরেডি স্ল্যাব বসাচ্ছি।
“যেসব জায়গায় প্রকল্পের কাজ চলছে না, জানুয়ারির মধ্যে সেসব নালায় স্ল্যাব বসিয়ে দেব। তারপর ফেন্সিং করা হবে। অনেক নালায় ফেন্সিংও করা যায় না, কারণে পিছনে দোকান।”
প্রকল্পে সমন্বয়ের অভাব থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র বলেন, “সমন্বয় অবশ্যই আছে। আমাদের কথাবার্তা হয়। কাজ শেষ না হলে সিটি করপোরেশন কিছু করতে পারবে না। নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই বলেছি।
“নিরাপত্তার অভাবে এটা হয়নি। কারণ ওই ছেলে ওখানে নিজে নেমেছে। আমি কাউকে দায়ী করব না।”
যেসব খালে প্রকল্প চলছে, সেখানে বেড়া দেওয়া দরকার ছিল না কিনা- এমন প্রশ্নে রেজাউল বলেন, “দরকারই ছিল। কোথাও রাস্তায় যদি একটা গর্তও করা হয়, তাহলে ফেন্সিং দিতে হয়। জননিরাপত্তার কথা ভেবে।”
চলতি বছরের ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার মধ্যে ২৫ অগাস্ট মুরাদপুর এলাকায় চশমা খালে পড়ে তলিয়ে যান সালেহ আহমদ নামের এক সবজি ব্যবসায়ী। এরপর আর তার খোঁজ মেলেনি।
তার আগে ৩০ জুন ষোলশহরের চশমা হিল এলাকাতেও এমন দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে একটি অটোরিকশা খালে পড়ে গেলে মারা যান চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগম (৬৫)।
সবশেষ ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে আগ্রাবাদে নবী টাওয়ারের কাছাকাছি নাছিরছড়া খালে পড়ে তলিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাদিয়া। পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় কয়েক টন আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে ১৯ বছর বয়সী সাদিয়ার লাশ উদ্ধার হয়।
০১৮ সালের ৯ জুন নগরীর আমিন জুট মিল এলাকায় নালায় পড়ে মারা যায় আল আমীন নামে ৭ বছরের এক শিশু।
পুরনো খবর