হাতির করিডোর: ডিসেম্বরে প্রতিবেদন পাওয়ার আশা

হাতির চলাচলের পথ বা করিডোর ধ্বংস হওয়ায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে হাতি লোকালয়ে চলে আসায় মৃত্যুও বাড়ছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2021, 07:32 PM
Updated : 2 Dec 2021, 07:32 PM

হাতির বিচরণ অবাধ করতে এ অঞ্চলে করিডোর নির্মাণের যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে, তার প্রতিবেদন ডিসেম্বর নাগাদ  পাওয়ার আশা করছে বন বিভাগ।

তবে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার-ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এ করিডোর তৈরির বড় বাধা হিসেবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বনভূমি কমা, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগসহ বৈদ্যুতিক ফাঁদকে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন বিভাগের হিসাবে, দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসরত হাতির সংখ্যা ২৬৮। এছাড়া ভারত ও মিয়ানমার থেকে দেড় শতাধিক হাতি বিভিন্ন সময়ে যাওয়া-আসা করে থাকে।

১৯৯২ সাল থেকে গত ৩০ বছরে হাতি মারা গেছে মোট ১৪২টি। শুধু চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই মারা মারা যাওয়া হাতির সংখ্যা আটটি।

সর্বশেষ মঙ্গলবার বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে একটি হাতির মৃতদেহ পাওয়া গেছে। বনবিভাগ বলছে, বৈদ্যুতিক শকেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্যহাতির কোনো সীমানা নেই। মিয়ানমার, ভারত থেকে হাতি আমাদের দেশে আসা-যাওয়া করে।

“তাদের আসা-যাওয়ার পথের নিরাপত্তা দিতে হবে, খাবারের নিশ্চিত সংস্থান থাকতে হবে, প্রজননের যথাযথ সুযোগ থাকতে হবে।”

এজন্য সরকারের কাজের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর চলাচলের আন্তঃদেশীয় নিরাপদ করিডোর তৈরির সম্ভাব্যতা তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে রেজাউল বলেন, “ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এ প্রতিবেদন আমরা পাবো এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

বন বিভাগের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইইউসিএন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ দল যৌথভাবে এ করিডোর নির্মাণের কাজে যুক্ত রয়েছে। এতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে আছেন হাতি বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল আজিজ এবং একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান।

আইইউসিএন কর্মকর্তারা জানান, এ অঞ্চলে তিনটি ক্লাস্টারে এ করিডোরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। 

বাঘাইছড়ির কাচালং রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে সিজকছড়ি, পাবলাখালী। কাপ্তাই, দুধপুকুরিয়া ধোপাছড়ি হয়ে রোইখ্যং অথবা কাপ্তাই হয়ে রোইখ্যং রুটে একটি এবং চুনতি, লামার গজালিয়া, নাইক্ষংছড়ি হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত অপর করিডর চিন্তা করা হচ্ছে। 

ইতোমধ্যে ওইসব এলাকা পরিদর্শনও শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে করিডোরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন দেওয়া হবে আইইউসিএন এর পক্ষ থেকে।

অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কাচালং থেকে টেকনাফ পর্যন্ত অন্তত তিনটি করিডোরের চিন্তা করা হচ্ছে। আগে যে করিডোর ছিল, তা বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। হাতি বা বন্যপ্রাণীর চলাচলের পথের সংযোগ করতে এ কাজ করা হচ্ছে।”

বিভিন্ন সময়ে হাতির মৃত্যু বেড়ে যাবার কারণে ২০১৮ সালে এই প্রস্তাবিত করিডরটির চিন্তা শুরু হয়। কাচালং থেকে টেকনাফ মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত প্রস্তাবিত করিডরটির প্রশস্ততা থাকবে প্রায় আধা কিলোমিটার। এর নাম দেওয়া হচ্ছে ‘মুজিব করিডোর’।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯২ থেকে হাতি হত্যায় হওয়া ৩৭ মামলার একটিও নিষ্পত্তি হয়নি। ১৯৯২ সাল থেকে ১৪২টি হাতি মারা গেছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ২২টি, ২০২১ সালে ১১টি হাতি মারা গেছে।

বন কর্মকর্তা মোল্লাহ রেজাউল বলেন, “আমাদের হিসেবে মারা যাওয়া হাতির মধ্যে ৩৭টি হত্যা করা হয়েছে। এজন্য ৩৭টি মামলাও হয়। কিন্তু কোনো মামলার নিষ্পত্তি হয়নি।”

এজন্য জনবল সঙ্কটকে কারণ দেখান তিনি।

হাতির মৃত্যুর জন্য বন বিভাগের করা মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকে ডেপুটি রেঞ্জার পদধারীরা। কিন্তু প্রায় সাড়ে চারশ ডেপুটি রেঞ্জার পদের মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সব খালি। আবার ৪০৫ রেঞ্জার পদের মধ্যে আছেন মাত্র ৫০ জন। এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হয়।

ডেপুটি রেঞ্জার পদরির লোকজনের বদলে বিট অফিসার বা ফরেস্টাররা মামলার তদন্ত করলে আইনের ফাঁকের কারণে মামলা ট্রায়ালে আসে না এবং তদন্তে ধীর গতি হয় বলে জানান বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম।