আবেদন নয়, আইনি লড়াই: খন্দকার মোশাররফ

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন না করে আইনি লড়াই চলিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2021, 04:11 PM
Updated : 30 Nov 2021, 04:11 PM

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে বিএনপির ডাকে মঙ্গলবার দেশব্যাপী বিভাগীয় সমাবেশের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

খন্দকার মোশারফ বলেন, “যে ব্যক্তি দোষ করে, সে দোষ স্বীকার করে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চাইতে পারে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কোনো দোষ করে নাই, তিনি দোষী নন। তাকে গায়ের জোরে সরকারের নির্দেশে একটি ভুয়া মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে।

“খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী। দোষ না করেও দোষ স্বীকার করে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন এ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নন। এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় এটা তিনি প্রমাণ করেছেন। আজ যারা এসব কথা বলেন, তারা এরশাদ সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে হাত মিলিয়ে নির্বাচন করেছিলেন।”

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সরকারি আদেশে দেড় বছর ধরে মুক্ত থাকার মধ্যে এখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন।

তার লিভার সিরোসিস হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, তাকে এখন সুচিকিৎসা দেওয়া বাংলাদেশে সম্ভবপর নয়, তাকে বিদেশ নিতে হবে।

খালেদা জিয়ার ভাই বিদেশ নেওয়ার আবেদন করলেও তাতে এখনও সাড়া দেয়নি সরকার। সরকারের মন্ত্রীরা আইনি জটিলতার কথা বলছেন।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আইনি বাধা নয়, ‘প্রতিহিংসার’ কারণে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

“দেশনেত্রীর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে প্রতিহিংসার কারণে একটি মিথ্যা মামলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়েছে। দেশের মানুষের দাবির মুখে সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকতে দিচ্ছেন।”

খালেদারি মুক্তির আদেশে শর্ত জুড়ে দেওয়াটা ‘মানবাধিকার বিরোধী’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে আইনের কোনো বাধা নেই। যে কন্ডিশনের ওপর বেগম জিয়ার সাজা অস্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়েছে, সে শর্তটি উঠিয়ে দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করতে দিতে পারেন।”

“আমাদের প্রতি কোনো দয়া মহব্বতের দরকার নাই। আপনারা যে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছেন, সেটা অপসারণ করেন,”  সরকারের উদ্দেশে বলেন এই বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন,“আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে এবং দেশকে ধ্বংসের শেষ সীমায় নিয়ে গেছে। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে। দলীয়করণের কারণে আজকে কেউ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।”

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য গোলাম আকবর খন্দকার, এসএম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম।

জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের বিবৃতি

সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।

মঙ্গলবার ফোরামের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ ও পরিবারের আবেদন সত্ত্বেও সরকার তার রাজনৈতিক সংকীর্ণ মানসিকতার কারণে এ ব্যাপারে কোনো কর্ণপাত করছে না। গত তিন বছরে সরকারের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে এই মহিয়সী নারী সুচিকিৎসার অভাবে এখন মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

“এমতাবস্থায় দেশের সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি হচ্ছে, জরুরি ভিত্তিতে বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক। অন্যথায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার দায় দায়িত্ব সরকারের বর্তমান নীতিনির্ধারকদের বহন করতে হবে।”

বিবৃতিদাতা শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-আমীন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এস এম নছরুল কাদির, ড. মো. শফিকুল ইসলাম, ড. মোহাম্মদ আল-ফোরকান, ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী, মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী, ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, আবু নছর মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, মোহাম্মদ  মঞ্জুর মোর্শেদ, মোহাম্মদ মেজবাউল আলম, এ জি এম নিয়াজ উদ্দিন, ড. মু. জাফর উল্লাহ্ তালুকদার, ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দিন, মোহাম্মদ  জমালুল আকবর চৌধুরী, ড. এ, কে. এম. মাহফুজুল হক, ড. জয়নাল আবেদীন সিদ্দিকী, ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আজম খান, ড. মোঃ শাহাদাত হোসেন, ড. জহুরুল আলম, ড. মোহাম্মদ সামছুদ্দোহা, ড. চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান, ড. মো: আমান উল্লাহ, ড. সিরাজ উদ্দীন, মোহাম্মদ আলম চৌধুরী, মুহাম্মদ যাকারিয়া, ড. আনোয়ার হোসেন।